রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাটকীয় পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপ। যুদ্ধরত দুই পক্ষকে অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করতে আহবান জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তার প্রশাসন জানিয়েছে, এই আলোচনায় ইউরোপ থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে জরুরি সম্মেলনে বসতে চলেছেন ইউরোপের নেতারা।
ট্রাম্প এই সপ্তাহে তার ইউরোপীয় মিত্রদের দারুণ এক চমকে দেখিয়েছেন। কারণ, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আগেভাগে কোনও আলোচনা ছাড়াই ফোন করেন এবং শান্তি আলোচনা অবিলম্বে শুরুর ঘোষণা দেন। এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপকে বাদ দেয়া হতে পারে, তা মিউনিখ সম্মেলনেই সতর্ক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একই সঙ্গে ইউরোপকে নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
শনিবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউক্রেনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত কেইথ কেলগ জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শান্তি আলোচনার পরিকল্পনা করছেন, তাতে ইউরোপকে যুক্ত করা হবে না। ইউরোপকে না রাখার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে কেলগ বলেন, এর আগের আলোচনাগুলো ব্যর্থ হয়েছিলো; কারণ, অনেক বেশি পক্ষ সেগুলোতে জড়িত ছিলো।
ইউরোপীয় দেশগুলো এবারের আলোচনার টেবিলে থাকবে কি না জানতে চাইলে কেলগ বলেন, আমি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। আমি মনে করি এটি ঘটবে না। পরবর্তীতে একই সম্মেলনে কেলগ ইউরোপীয়দের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এর মানে এই নয় যে তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়া হবে না বা ব্যবহার করা হবে না।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মহাদেশের অমন অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ থেকে ইউরোপের দেশগুলো জরুরি ওই সম্মেলনের আয়োজন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোরস্কি বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো জরুরি ওই সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। তবে মাখোঁ এখনো সম্মেলনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি।
ইউরোপীয় নেতারা এরিমধ্যে জানিয়েছেন, তারা আলোচনার বাইরে থাকা কোনভাবেই মেনে নেবেন না তারা। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব মিউনিখে আমরা ইউক্রেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ বা ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে কোনও আলোচনা বা সমঝোতা ইউরোপীয়দের বাদ দিয়ে করতে দেব না।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার প্যারিসে ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। স্টারমার বলেন, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তায় এমন মুহূর্ত ২০-৩০ বছরে একবারই আসে এবং এটা স্পষ্ট যে ন্যাটো (পরিচালনায়) ইউরোপকে আরও বড় ভূমিকা নিতে হবে।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে সৌদি আরবে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক হতে যাচ্ছে। শনিবার এক মার্কিন আইনপ্রণেতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কিত সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। যদিও, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সৌদি আরবে হওয়া এই আলোচনায় ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।