এক বছরেরও কম সময় হাতে। ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিলো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বৃহস্পতিবার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠক সারলেন তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে ২১৫ আসনের টার্গেট বেঁধে দিলেন মমতা। বুঝিয়ে দিলেন ২০২১সালে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে পাওয়া ২১৪ আসনের রেকর্ড দলকে ভাঙতে হবে ২০২৬ এ। নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মীরা কী করবেন, কী করবেন না তাও পয়েন্ট করে বুঝিয়ে দিলেন মমতা । একেবারে পরীক্ষার আগে শিক্ষক যেমন দেন ‘টিপস’, দলনেত্রী একেবারে এক ভঙ্গিতে নেতাজি ইনডোরে ক্লাস নিলেন দলীয় কর্মীদের। পাশাপাশি ভোটার লিস্টের স্বচ্ছতার প্রশ্নে নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশনকে এক হাত নেওয়ার পাশাপাশি বিজেপিকে টার্গেট মমতার। নির্বাচনের আগে আবারও তুললেন এনআরসি প্রসঙ্গ।
মমতা বলেন, দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে হবে। এলাকায় কে আসছে, না আসছে নজর রাখতে হবে দলীয় কর্মীদের। এলাকায় যাতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, নজর রাখতে হবে সেদিকে।
মমতার কথায় মমতা বললেন, 'এই ভোট বিজেপি সিপিএম-এর জামানত জব্দ করার ভোট।'
দলের ইনঅ্যাক্টিভ নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে মমতার সাফ বার্তা, যারা ভালো কাজ করছেন তাদের পদোন্নতি আমরা করবো। কিন্তু যারা কাজ করেন না, শুধু ভাষণ দেন, বিবৃতি দেন, পার্টির সমালোচনা করেন, বিজেপি সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করেন না, মানুষের পাশে থাকেন না, তাদের জন্য আমার কোনো দয়ামায়া নেই।
এদিন কর্মীদের ভোটের টিপস দেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ, ভোটের আগে ভোটার লিস্টে কারচুপি করেছে কমিশন।
মমতা বললেন, ভোটের সবরকমের প্রস্তুতির শুরু এবার ভোটার তালিকা থেকেই। কিন্তু ভোটার তালিকা থেকে আঁধার কার্ড সব বিষয়ে কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা।
নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতার হুঁশিয়ারি, এই বিষয়ে যদি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হল আগামী দিনে নির্বাচন কমিশনের দফতরে ধর্না দেবেন তিনি।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভা থেকে মমতার বার্তা, ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। একটা এজেন্সি দিয়ে অনলাইনে করানো হয়েছে। ওরা একটা বাংলায় এজেন্সি পাঠিয়েছে। এদের অনেক লোক এসেছে। এরা অনলাইনে কারসাজি করছে। ফিল্ড সমীক্ষা করেনি। একই এপিক কার্ডে বাংলায় অন্য রাজ্যের নাম তুলেছে। ভোটার লিস্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। যাতে বাংলার কেউ ভোট না দিতে পারেন। মুর্শিদাবাদের রানিনগরের সঙ্গে হরিয়ানা মিলিয়ে দিয়েছে।
প্রামাণ্য নথি হিসেবে ভোটার লিস্ট হাতে নিয়ে মমতার অভিযোগ, একই এপিক নম্বরে বাংলার ভোটারদের যার নাম আছে, সেখানে হরিয়ানা, পঞ্জাব থেকে সব নাম ঢুকিয়েছে। এবার ভাবুন কারা ভোট দেবে? এই লিস্টটা দেখছেন সব হরিয়ানা। একই এপিক কার্ডে কোথাও হরিয়ানা, কোথাও গুজরাত, গঙ্গারামপুর থেকে ঢুকিয়েছে। সব গুজরাত, হরিয়ানা থেকে। অনলাইন, ভোটার লিস্ট দিল্লি থেকে করছে। ইলেকশন কমিশনের অফিস থেকে বসে। এইভাবে দিল্লিকে, মহারাষ্ট্রকে হারিয়েছে। ওরা এই খেলাটা ধরতে পারেনি। আমরা পেরেছি। চালাকিটা বুঝতে পারছেন? আমি কিন্তু আপনাদের রহস্যটা উন্মোচন করে দিলাম। এর পরের কাজটা আপনাদের। বাংলার মানুষকে বলবো, আপনি দেখে নিন ভোটার লিস্টটা। না হলে এনআরসি করে সরিয়ে দেবে। ডেটা অপারেটরদের লক্ষ্য রাখুন।
নির্বাচনের আগে ফের এনআরসি ইস্যু খুঁচিয়ে তুলে মমতা বলেন, আমি রহস্য উন্মোচন করলাম। এবার দায়িত্ব আপনাদের। বাংলার মানুষকে বলবো ভোটার লিস্ট দেখে নিন। নাহলে এনআরসি করে সরিয়ে দেবে। আপনাকে ছাঁটাই করবে। এটা হচ্ছে ইসি’র আশীর্বাদে। ডেটা অপারেটরদের লক্ষ্য রাখুন। অনেক জায়গায় মিষ্টির প্যাকেট গিয়েছে। আমি হাতেনাতে ধরবো। জেলাশাসকদের দেখার দায়িত্ব ছিলো। ভোট আসলেই ইসি তাদের ধমকে চমকে রাখে। এত ভয়ের কী আছে। ওদের আয়ু দু-তিন মাস। আমরা পাঁচ বছর আছি। সেই কাজ শুরু হবে ভোটার লিস্ট দেখে।