ভারতে পর্যটকদের উপর হামলা ও যৌন সন্ত্রাসের ঘটনা দেশটি জুড়ে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ভারতের পুলিশ দেশটির এক ঐতিহ্যবাহী স্থানের কাছে পর্যটকদের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৃতীয় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব ঘটনায় দলে দলে মন্দিরের শহর ছাড়ছেন বিদেশি পর্যটকরা।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে বৃহস্পতিবার রাতে এক পুরুষকে হত্যা করেছে এবং একজন ইসরাইলি পর্যটক এবং ভারতের এক ব্যক্তিগত আবাসন মালিক গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের সঙ্গে থাকা এক পুরুষকেই হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা রাম আরাসিদ্দি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে কর্ণাটকের হাম্পিতে একটি হ্রদের কাছে তিন পুরুষ পর্যটকের সঙ্গে ঘোরাঘুরির সময় দুই নারীর ওপর একদল পুরুষ হামলা চালায়। আরাসিদ্দি বলেন, হামলাকারীরা নারীদের ধর্ষণ করার আগে তাদের সঙ্গে থাকা পুরুষদের তুঙ্গভদ্রা নদীর খালে ফেলে দেয়।
দুই পুরুষের মধ্যে একজন আমেরিকান এবং তিনি বেঁচে যান এবং তৃতীয় ব্যক্তির মৃতদেহ শনিবার সকালে উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান। পুলিশ হামলার জন্য অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্ত চলছে বলে আরাসিদ্দি জানিয়েছেন। পুলিশের ধারণা, হামলাকারীরা নারী-পুরুষের এই দলটিকে অনুসরণ করেছিলো।
ভুক্তভোগী এক নারীর সাক্ষ্য অনুসারে, তারা সানাপুরের একটি মন্দিরের কাছে রাতের আকাশের সৌন্দর্য দেখার সময় তিন পুরুষ মোটরসাইকেলে করে তাদের কাছে আসে এবং তারা পেট্রোল কোথায় পাবে জিজ্ঞাসা করে। দলের একজন সদস্য এক পর্যটকদের কাছ থেকে ১০০ রুপি দাবি করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হোমস্টে অপারেটর তাদের চিনতে না পারায় তিনি তাদের বলেন, তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। অভিযুক্ত পুরুষরা বারবার জোর করার পর পর্যটক দলের এক পুরুষ তাদের ২০ রুপি দেন। এরপর ওই তিনজন তর্ক শুরু করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জার্মানভিক্তিক বার্তা সংস্থা ডয়েসে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনায় আবারও প্রশ্নের মুখে ভারতে নারী সুরক্ষার বিষয়টি। এমনকি, বিদেশি নারী পর্যটকদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বার বার ঘটে চলেছে এই দেশে। গত মাসেই এক আইরিশ পর্যটককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে গোয়ার এক ব্যক্তির যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছে গোয়ার এক আদালত।
গত বছর মার্চে ঝাড়খণ্ডে ধর্ষিত হন স্পেনের এক পর্যটক। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও ধর্ষণের সংখ্যা বিপজ্জনক ভাবে বেড়েছে। ন্যাশানাল ক্রাইম ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২তে ২৫ হাজারের কাছাকাছি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে কোভিডের দুটো বছর বাদ দিলে প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজারের বেশি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬তে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০ হাজারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো।
২০১৮-র একটি সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১৫ মিনিটে একজন মহিলা ধর্ষিতা হতেন এই দেশে। সর্বশেষ পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-এ ৩১ হাডার ৫১৬টি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
ভারতের নারী সুরক্ষার চিত্র নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং সমাজকর্মীরা। আজাদ ফাউন্ডেশনের দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন নারীদের সুরক্ষা দিতে সামাজিক স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতে হবে। তিনি বলে, রাষ্ট্রকেই এ বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। ঠিক যেমন করে সাক্ষরতা বা পোলিও টিকাকরণের সচেতনতা প্রচার করা হয়েছিল তেমন করেই নারী সুরক্ষা, তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর শিক্ষা দেওয়ার কাজ করা প্রয়োজন।
প্রাথমিক ভাবে এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর বর্তালেও সমাজকর্মী ও সমাজের বিশিষ্টজনদেরো এই বিষয় দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন দোলন। "টক্সিক ম্যাসকিউলিনিটির প্রভাব কাটাতে সমাজের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে দেশের অথবা বিদেশের মহিলা, কাজ করতে যাওয়া অথবা বেড়াতে যাওয়া মহিলা– কাউকেই নিরাপদে রাখতে পারব না আমরা।