যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় মঙ্গলবার ভোরে ব্যাপক আকারে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। ভয়াবহ এসব হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০৪ জন। হামলায় আহত হয়েছে আরো বহু মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে রয়টার্স, বিসিবি ও এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান মোহাম্মেদ জাকুত বলেন, তাদের মন্ত্রণালয় ৪০৪ জনের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে। তাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ মঙ্গলবার সকালে এ হামলার নির্দেশ দেন। আর হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা করেছে ইসরাইল।
ঘুমন্ত গাজাবাসীর ওপর আবারো বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি ভেঙে মঙ্গলবার ভোরে গাজাজুড়ে ব্যাপক আকারে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনায় অচলাবস্থার পর এ তাণ্ডব চালানো ইসরাইল।
গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস, রাফাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিমান হামলায় হামাস কমান্ডার এবং রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। যদিও ফিলিস্তিন বলছে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরকি নাগরিক।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছে, নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ মঙ্গলবার সকালে এ হামলার নির্দেশ দেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা বেশ কয়েকটি জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ পর্যন্ত এ হামলা অব্যাহত থাকবে এবং তা শুধু বিমান হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এছাড়া গাজায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছে এক সামরিক কর্মকর্তা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। সংগঠনটি জানিয়েছে, হামলার মধ্যে দিয়ে তেলআবিব গাজায় এখনো আটক থাকা ৫৯ জনের ভাগ্য অনিশ্চিত করে তুলেছে। তবে হামাস এখনও নতুন করে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয়নি।
তার বদলে মধ্যস্থতাকারীদের এবং জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহবান জানিয়েছে। এদিকে, হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা করেছে ইসরাইল।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, গাজায় সবশেষ হামলা চালানোর আগে ইসরাইল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করেছে, পরামর্শ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস, হুথি ও ইরান শুধু ইসরাইল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও হুমকি। এ কারণে তাদের মূল্য চুকাতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে জবাবদিহি করার জন্য হামাস যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে এবং আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি।
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় হামাস-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। তখন থেকে ইসরাইলি সেনারা সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা ছোট দলকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল। তবে মঙ্গলবারের হামলার মাত্রা অনেক বেশি ছিল।