গেলো কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। বিকেল থেকেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, এমন কথা জানিয়ে নিরপেক্ষ স্থানে বৈঠকে বসার কথাও জানিয়েছে দিল্লি-ইসলামাবাদ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির খবর দেয়ার পরপরই বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারত-পাকিস্তানও। এদিকে, যুদ্ধবিরতির খবরে স্বস্তি জানিয়েছে কাশ্মীরের মানুষ।
গেলো ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হবার পর থেকে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলে, ইসলামাবাদ তা অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর থেকেই চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়। ৬ মে অপারেশন সিঁদুর নামে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে সামরিক অভিযান চালায় ভারত।
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দিলে, কাশ্মীরসহ দু’দেশের বিভিন্ন সীমান্তে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ আসতে শুরু করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ে।
সিঁদুরের জবাব পাকিস্তান অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস শুরু করায় ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ। এতে নড়েচড়ে বসেন বিশ্বনেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই এই সংঘাতকে লজ্জার ও হতাশাজনক উল্লেখ করে আলোচনায় বসতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রতি আহবান জানিয়ে আসছিলেন তিনি।
শনিবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেয়া এক পোস্টে তিনি জানান, যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দুই দেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণ জ্ঞান ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দু’দেশকে অভিনন্দন। চলমান সংকটের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চুক্তির পর ভারত ও পাকিস্তান সামরিক চ্যানেল এবং হটলাইনও সক্রিয় করেছে।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তান সবসময়ই আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে। তবে সে জন্য আমরা নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করব না।
পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক বিকেলে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং একটি চুক্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক শনিবার বিকালে তার ভারতীয় সমকক্ষকে ফোন করেন এবং দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে একটি চুক্তি হয়।
উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে সব ধরনের যুদ্ধ ও সামরিক কার্যক্রম ভারতীয় সময় শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে বন্ধ থাকবে।
বিক্রম মিশ্র আরও যোগ করেন, এই সমঝোতা কার্যকর করার জন্য উভয় পক্ষকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সামরিক অভিযানের মহাপরিচালকরা আবার ১২ মে দুপুর ১২টায় কথা বলবেন।
এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভারতশাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। এছাড়া, পাকিস্তানের আকাশসীমা সব ধরনের ফ্লাইট চলাচলের জন্য সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।