ইসরাইল ইরানে পারমাণবিক হামলা করলে পাকিস্তানও পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে। এমন দাবি করেছেন ইরানের একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তান এ বিষয়ে ইরানকে আশ্বস্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। অর্থাৎ সংঘাতে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছে পাকিস্তানও। তবে গল্পের শুরুটা অনেক পুরোনো।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর মধ্যেই বিধ্বংসী তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেছেন, ইসরাইল যদি ইরানের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে পাকিস্তানও ইসরাইলে পারমাণবিক হামলা চালাবে। খবরটি অবশ্য দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য জেনারেল মহসেন রেজায়ি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পাকিস্তান ইরানকে আশ্বস্ত করেছে, যদি ইসরাইল পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তাহলে ইসরাইলে পারমাণবিক হামলা করবে তারা। পাকিস্তান ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ডাক দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরাইল ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েক দশক আগে ষড়যন্ত্র শুরু করে ইসরাইল। ১৯৮১ সালে পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তা চেয়েছিলেন তৎকালীন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন। প্রাথমিকভাবে রাজি হলেও পরে প্রস্তাবটি বাতিল করেন ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু কেন?
সেই সময় পাঞ্জাবে ভিনদানওয়ালে বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। একই সময় উত্তাল হয়ে ওঠে জম্মু-কাশ্মীর। আর পেছনের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র। এসবের জেরে দিল্লিতে জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের সহ প্রতিষ্ঠাতা মকবুল ভাটকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, বার্মিংহামে প্রাণ হারান ভারতীয় কূটনীতিক রবিন্দ্র হাতরে।
রাজনৈতিকভাবেই টাল-মাটাল অবস্থায় ছিলো ভারত। সেখানে ইসরাইল হামলা করলেও যুদ্ধের মূল ক্ষয়-ক্ষতিটা ভোগ করতে হতো ভারতকেই।
ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তান ইসরাইল থেকে দুরে এবং ভারত থেকে কাছে। তার উপর, পাকিস্তানে হামলা করলে সামলাতে হতো ওয়াশিংটনকেও। সেই সময়ের হামলার আশঙ্কাতেই ১৯৮২ সালে পাকিস্তানতে এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু এবং ১৯৮৮ সালে জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর দুই দেশের ক্ষমতায় বসেন রাজিব গান্ধী ও বেনজির ভুট্টো। ততদিনে দুই দেশই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে। আর পরস্পরের ওপর হামলা করার মনোভাব থেকে সরে গিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি চুক্তি করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, পরস্পরের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করবে না কেউই।
তখন থেকেই প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি নিজেদের পরমাণু কার্যক্রমের তথ্য একে অপরের সাথে বিনিময় করে বিশ্বের অন্যতম দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তান।