ইরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, পরমাণু বোমা তৈরি কোন ইচ্ছাই তাদের নেই। কিন্তু তেহরানের এমন কথায় বিশ্বাস করতে নারাজ ইসরাইল ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের ভয়, ইরানের পরমাণু অস্ত্রেই নিহিত রয়েছে তাদের মৃত্যুবান।
তাই ইসরাইল ও তাদের তাবেদার আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব কিছুতেই চায় না ইরানের কর্মসূচি এগিয়ে যাক। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শত্রুর যাতে পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, সেজন্য আন্তর্জাতিক সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইরানের বিভিন্ন পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে হামলা শুরু করে ইসরাইল।
গেলো ১৩ জুন, ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এরমধ্যে রয়েছে, নাতাঞ্জ ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্ট (এফইপি), খানেদাব হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর, ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র, বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেহরান রিসার্চ রিঅ্যাক্টর ও পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স।
ফোর্দো কেন্দ্রে হামলার প্রমাণ এখনও মেলেনি, তবে এটিও ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র। এই স্থাপনাটি তেহরান থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম শহরের কাছে অবস্থিত। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে অনেক গোপনে ও সুরক্ষিত উপায়ে তৈরি হয়েছে, যা ২০০৯ সালে বিশ্বের নজরে আসে।
তার পর থেকে এই প্লান্টটি নিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। এই কেন্দ্রেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয় এবং বলা হয়, এই প্লান্টটি বিমান হামলার বিরুদ্ধে অত্যন্ত সুরক্ষিত। এখানেও অন্তত ৩০০০ সেন্ট্রিফিউজ রাখার ব্যবস্থা আছে, যা ইউরেনিয়ামকে অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় উন্নত করতে পারে।
২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী একে গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তর করার কথা ছিল, এবং ১৫ বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়েও সম্মত হয়েছিলো ইরান। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর, ইরান এখানেও আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে।
ইরান ২০২১ সালের মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশে এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশে নিয়ে যায়। ইরান তাদের এই সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা আরো বাড়াবে বলে জানিয়েছে, যা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নিয়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা, পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ইরান।
নতুন সেন্ট্রিফিউজগুলো ইরানের ভূগর্ভস্থ নাতাঞ্জ ও ফারদো পরমাণু কেন্দ্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন সেগুলো বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পায়। নাতাঞ্জে বসানো উন্নত আইআর সিক্স সেন্ট্রিফিউজগুলো কাজ শুরু করেছে।
কূটনীতিকরা আইআর সিক্সকে ইরানের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রেফিউজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইরান খুব দ্রুত সপ্তম ক্যাসকেড বসানোর কাজ শেষ করছে। সেখানে আইআর ফোর ও আইআর টু সেন্ট্রিফিউজ বসানো হলেও সেগুলো এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করেনি।
টানা পাঁচদিন ধরে ইরানের হামলা চালালেও ফারদোতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি ইসরাইল। তাই, ইসরাইলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের ফারদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলার বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে।
ইসরাইল যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো একের পর এক ধ্বংসের দাবি করছে, তখনও অটলভাবে টিকে আছে তেহরানের দুর্গ- ফারদো। এটিই এখন ইসরাইলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ফারদোর প্রাণকেন্দ্র ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব বর্তমানের সেরা সামরিক শক্তি দিয়েও।