রাশিয়ার পর এবার ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার খেলায় মেতে উঠলো ইঙ্গো-মার্কিন জোট। দুদেশ প্রায় একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এবার আমেরিকা ও বৃটেনের লক্ষ্য ইরানের ড্রোনের ওপর। ইরানের মানুষ্যহীন ড্রোন কর্মসূচির টুঁটি চেপে ধরতে চায় এই জোট।
দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে, ইসরাইলের মাটিতে নজিরবিহীন ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে হামলা চালায় তেহরান। যদিও তেল আবিব দাবি করেছে বেশিরভাগ ড্রোন ও মিসাইলকে আকাশেই ধ্বংস করেছে তারা ও মিত্ররা। এই হামলার পরই ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা জানায় পশ্চিমারা।
ইরানের ড্রোন কর্মসূচি নিয়ে অনেক দিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে পশ্চিমারা। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের তৈরি কামাকাজি ড্রোনের সফলতায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। এবার সেই ড্রোন ইসরাইলের মাটিতে হামলায় ব্যবহার করায় আর বসে থাকতে পারেনি ওয়াশিংটন।
ইরানের ড্রোন উৎপাদনের রেশ টানতে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জি-৭ নেতারা তেহরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৩ এপ্রিল তারা ইরানি ড্রোন ও মিসাইলকে পরাভূত করতে একসঙ্গে কাজ করেছেন, সামনেও করতে হবে।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ইসরাইলে মাটিতে নির্লজ্জ আক্রমণের কারণে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইরান সরকারের মিসাইল ও ড্রোন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত নেতা এবং সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি করা হয়েছে।
যথারীতি আমেরিকার পথেই হেঁটেছে ইসরাইলের আদি দোসর যুক্তরাজ্যেও। দেশটি জানিয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় করে তারাও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও চালু করছে। ইতালিতে জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সভার ফাঁকে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ইরানের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের ড্রোন উৎপাদনে সক্ষম এমন ১৬ ব্যক্তি এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইরানের শাহেদ ভ্যারিয়েন্ট ইউএভি (ড্রোন) রয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে হামলায় ইরান এই ড্রোন ব্যবহার করেছিল।
যুক্তরাজ্যও ইরানের ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত দেশটির সামরিক বাহিনী-সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংস্থা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে ফিরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবেন ক্যামেরন।
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, আজকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় এবং অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ইসরায়েলে ইরানের নজিরবিহীন হামলার জবাব দিতে দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি জানান, ইরানের মারাত্মক কর্মকাণ্ড নসাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সব পদক্ষেপ নেবে। আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষগুলোর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইয়েলেন বলেন, ইরানের হামলা এমন হামলা অকল্পনীয়।
শনিবার রাতে ইসরাইলে অভাবনীয় হামলা চালায় ইরান। ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলের বিমান হামলায় কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা নিহতের প্রতিশোধ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়। এ হামলায় তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইরান।
এগুলোর বেশির ভাগই আকাশে ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরাইল। এ হামলা রুখতে ইসরাইলকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান। এ হামলার জবাবে ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। ইরানও হুশিয়ারী দিয়ে বলেছে, পুনরায় আক্রান্ত হলে আরও বড় হামলা চালানো হবে।