স্বীকার করুন বা নাই করুন, খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে বড় কোন বিনোদন নেই। আর আনন্দ-উৎসব মানেই দারুণ সব খাবারের আয়োজন। তবে আজকাল ভোজন রসিক মানুষের প্রতিদিনই যেন উৎসব। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন ঘরে বসেই বিনা খাটুনিতে পাওয়া যায় মনের মতো নানা পদের খাবার। তবে পকেটে টাকা থাকা চাই! আবার টাকা থাকলেও অনেক সময় ভাল মানের খাবার জুটে না। আজকে আমরা এমন একজনের গল্প শুনবো যিনি এই খাবারকে শিল্প হিসেবে নিয়েছেন। শিল্প এই অর্থে বলা, যেখানে বাড়তি যত্ন ও মমতার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাহলে শোনা যাক রাফাত আরা ডালিয়ার পথ চলার গল্প।
‘মনে হয় আমার বাচ্চার জন্য রান্না করছি’
‘‘কোন মা-ই কিন্তু আর যাই করুক তার বাচ্চাদের জন্য বেস্টটা বা সর্বোচ্চটা দিবে, আমি যখনই খাবার তৈরি করি মনে হয় আমার বাচ্চাদের জন্য করছি। আমি যে কাজটাই করি সেটা ফ্রেস এবং ভালটাই করি। যারাই আমাকে খাবারের অর্ডার দেয়, প্রতিটা খাবার তৈরির সময় মনে হয় আমার দুই ছেলের জন্য রান্না করছি।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করি ‘Taste T By Daalia’। যেহেতু কোভিডের জন্য কোথাও বের হওয়া যাচ্ছিল না, আবার কিছু একটা কাজও করতে হবে, আমি কাজের সাথেই থাকতে পছন্দ করি। রান্না করতে ভাল লাগে, পরিবারের সবাই আমার হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসাও করে তাই ছোট করেই প্রথমে হোমমেড ফুড ডেলিভারি শুরু করলাম। আমার কাছের বন্ধুবান্ধবরা উৎসাহ দিয়ে তারাই অর্ডার দেওয়া শুরু করে । মজার বিষয় হলো যারা খাবার একবার নিয়েছে তারা বারবার অর্ডার দেয়। আমার খাবারের বৈশিষ্ট হলো টাটকা, অর্ডারের পর বাজার থেকে ফ্রেস সব কিছু রান্নার জন্য নিয়ে আসি। আর দাম সবার সাধ্যের মধ্যে। যেহেতু আমাকে কোন আউটলেট বা রেস্টুরেন্টের ভাড়া দিতে হচ্ছে না। রান্নাটা আমি নিজ হাতে করি। আমার কোন সেফ নেই, তবে কাজে সহায়তার জন্য কিছু কর্মী নিয়োগ করেছি। দু’একটা খাবার দিয়ে শুরু করলেও এখন বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের খাবার তৈরি করি। কর্মব্যস্ত জীবনেও মানুষ হাতের কাছে পাক তার কাঙ্খিত খাবার।
আমার বাবার পরিবারের সবাই খুব ভোজন রসিক, বিয়েও হয়েছে জমিদার পরিবারের ছেলের সাথে তাই অন্যকোন ব্যবসা বা কাজে মন না দিয়ে খাবারের কাজটিই যত্ন দিয়ে করছি। ঐতিহ্যবাহী রান্নাগুলো মা-শাশুড়ির কাছ থেকেই শিখেছি ।
এইচএসসিতে ফোর্থ স্ট্যান্ড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি অক্সফোর্ড স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। এইচএসসিতে আমি ঢাকা বোর্ড থেকে ফোর্থ স্ট্যান্ড করি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং কিছুদিন পর পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো। আমি বিশ্বাস করতাম, যে কাজই করি না কেন, চাইলে সেরাটা করা যায়। পড়াশুনা হোক বা ব্যবসা যাই করি না কেন সেরাটা করতে হবে। আর অবশ্যই কাজে সততা থাকতে হবে। সফল হওয়া আসলে দূরহ কোন বিষয় নয়।
‘আমার তৈরি খাবার সবাই পছন্দ করে, কিন্তু কাজটাকে ছোট করে দেখে’
আমার সহপাঠিরা অনেকেই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। আমিও হয়তো সেরকম একজন হতে পারতাম। এতে আমার তেমন কোন দুঃখ নেই। একটা বিষয় আমাকে খুব তাড়া করে, আমি কে, আমার নিজের কী পরিচয়? হতে পারি অমুকের মেয়ে, বড় কোন অফিসারের বউ, কিন্তু আমার নিজের কী পরিচয়? খুব চেয়েছি আমার নিজের একটা স্ট্রং পরিচয় হোক। কিছু একটা আমাকে করতেই হবে। আমি কোন কাজটা ভাল পারি এবং আমার ভাললাগা আছে কোন কাজটাতে। এই চিন্তা থেকে শুরু করলাম আমার পথ চলা। উদ্দেশ্য ভালমানের টাটকা খাবার সরবরাহ করা। কর্মজীবী মায়েরা সবসময় চাইলেও পারেন না তাদের সন্তানদের মজার এবং ফ্রেস খাবার খাওয়াতে। আমি এমন মায়েদের কাছে পৌছেঁ দিই মায়ের হাতের রান্না ( আমিও তো একজন মা)।
আমাদের দেশে রান্নার কাজটা সত্যি বলতে ছোট করে দেখা হয়। যারা রান্না করেন তাদের ওতোটা সম্মান দেওয়া হয় না। আমি কাজ করতে গিয়ে এগুলো দেখেছি। আমার রান্না করা খাবার সবাই খুব পছন্দ করে কিন্তু আমার কাজটাকে অনেকেই ছোট করে দেখে..!’’