বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের খামখেয়ালীপনার কারণে ইউক্রেনে বাংলাদেশের নাবিকরা রাশিয়ার হামলার শিকার হয়েছে এমন দাবি সাবেক নাবিকদের।
তারা বলছেন, যুদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে জানার পরও নাবিকদের জাহাজ নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে যেতে বাধ্য করেছিলো কর্তৃপক্ষ।
অথচ যুদ্ধ এলাকা ঘোষণা হলেও সেখানে জাহাজ চলাচল না করালেও সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হতো না বলেও দাবি করেছেন সাবেক নাবিকরা।
গেলো ১৫ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণ সাগর ও বসফরাস প্রণালীকে যুদ্ধ এলাকা ঘোষণা করে জয়েন্ট ওয়ার্ক কমিটি। ১৬ তারিখ বিষয়টি বিএসসিকে জানিয়ে দেন বাংলার সমৃদ্ধির অধিনায়ক।
তারপরও চুক্তির অজুহাত তুলে বাংলার সমৃদ্ধিকে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পণ্য নেয়ার জন্য যেতে বাধ্য করে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)।
যদিও এ সময় জাহাজ না পাঠালে বাংলাদেশ কোন ক্ষতির মুখে পড়তো না। ২২ তারিখ অলিভার বন্দরে নোঙ্গর করে বাংলার সমৃদ্ধি।
এরপর ক্যাপ্টেন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি করতে পারবে না। এর একদিন পরই পর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া হামলা চালায় ইউক্রেনে।
আরও পড়ুন: বাংলার সমৃদ্ধি'র ২৮ ক্রুকে পোল্যান্ডে নেয়ার প্রস্তুতি
সমুদ্রপথে নির্দেশনা দেয়ার জন্য স্থানীয় নাবিক না থাকায় অলিভার বন্দর থেকে আর বের হতে পারেনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। জাহাজের সাথে আটকা পড়েন ২৯ নাবিক।
২২ তারিখ থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত আট দিন আটকা থাকার পরও নাবিকদের জাহাজ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেনি কর্তৃপক্ষ।
দুই মার্চ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি হামলার শিকার হয়। মারা যান জাহাজটির সেকেন্ড ক্যাপ্টেন হাদিসুর রহমান।
শুক্রবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং এলাকায় মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) নেতারা এই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানান।
এ সময় তারা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ওই অঞ্চলে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ গমনের অনুমতি দেয়ায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মৃত্যুর মতো করুণ পরিস্থিতি দেখতে হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির নেতারা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ পরিচালনায় গাফিলতির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবি জানান।
সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, মেরিন আইন অনুযায়ী যুদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা এলাকা জাহাজ না গেলেও চুক্তি করা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো না। তারপরও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কেন এতো বড় ঝুঁকি নিলো তা বোধগম্য নয়।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মাত্র চার বছর আগে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকায় নির্মিত এমভি বাংলার সমৃদ্ধি প্রায় ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে।
প্রচলিত নিয়মেই বিমা কোম্পানি জাহাজের ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু নাবিক মৃত্যুর দায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ কে দিবে সেই প্রশ্নও তুলেছেন সাবেক নাবিকরা।