দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের ভোটের তারিখ ঘোষণা করে সিইসি। এর আগে, আরও ১১টি নির্বাচন হয়েছে। এটি দেশের ১২তম সংসদ নির্বাচন।
তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন পত্র জমার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। এ দিন থেকেই প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ হবে ৫ জানুয়ারি সকালে।
মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। নিয়মানুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। সেই হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।
এবার ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপারে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৫৩ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন।
তফসিল ঘোষণার আগে তা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসে কমিশন। কমিশন বৈঠকের পর নির্বাচন ভবন থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। বাংলাদেশ টেলিভিশন তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে।
এমন এক সময়ে সিইসি তফসিল ঘোষণা করলেন যখন, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো সহিংস আন্দোলন চালাচ্ছে।
আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়।
তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গণতন্ত্রকামী বাঙালির জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের এবং একটি ঐতিহাসিক দিন। এর মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তফসিল পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির প্রত্যাখান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দেলনরত বিএনপি বলছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য হাস্যকর।
বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য হাস্যকর। দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা তামাশা মাত্র। বিএনপি এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করছে।
একই দাবিতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে সেই নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি গণফোরামের ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ভোটে অংশ নেয়। ভোটে ভরাডুবি ঘটে বিএনপির। এরপর কারচুপির অভিযোগ তোলে তারা। সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেন।
এবার ২০১৪ সালের মত একই দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। ফিরে এসেছে সংঘাতের পরিবেশ। যানবাহনে অগ্নিংযোগ আর নাশকতার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি দেশটির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সংশয়ে রয়েছে তারা। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপের সময় শেষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা আগেই চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে ভোট দেবেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে।
সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতির কথা এর আগে বিভিন্ন সময়ে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।