গত সপ্তাহে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতীম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জার্মানির মিউনিখে তিন দিনের সফরের বিষয়ে শুক্রবার গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠনের পর এটা তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীণ নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠ রূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।
‘পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। এতে অংশ নেন দেশের প্রথম সারির টেলিভিশন এবং মুদ্রিত ও অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ প্রতিবেদকরা।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদে উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন মূলত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণ করেন।
এটিকে সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেন।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সফরের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি ‘ফ্রম পকেট টু প্লানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এই আলোচনায় আমার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত মান্যবর জন কেরি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মিয়া আমোর মটলে, এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মান্যবর মোসা জামির।
প্যানেলে উদ্বোধনী বক্তা ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই।
‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবতার অস্তিত্বের সংকটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে - এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি। আর তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।