সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় নানা স্থাপনায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এ তাণ্ডব। তার পর দুদিন নজিরবিহীন নৈরাজ্যে একে একে পোড়ানো হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের স্টেশন, বিআরটিএ ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হামলা চালানো হয় মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।
তাণ্ডবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো সরকারি স্থাপনায়ও আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা।
ঢাকার বাইরে নরসিংদীতে জেলা কারাগার এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে চালানো হয় তাণ্ডব।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ীর রাস্তা অবরোধ করে দুষ্কৃতকারীরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পরদিন বৃহস্পতিবারও এ এলাকা ছিলা আন্দোলকারীদের দখলে। দ্বিতীয় দফায় হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয় ওইদিন।
হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় এবং শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় হামলা চালানো হয়। হামলা চালানো হয় বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে। ভবনের বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। লুট করা হয় জিনিসপত্র।
১৮ জুলাই আগুন দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে। এর জেরে অন্তত ১২ ঘণ্টা বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিলো।
দুষ্কৃতকারীরা মহাখালীতে সেতু ভবনের সামনে থাকা যানবাহনে আগুন দেয়। সেইসঙ্গে আগুন দেওয়া হয় ভবনের নিচতলায়। তাদের দেওয়া আগুনে সেতু বিভাগের ৫৫টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সেতু ভবনের নিচতলায় থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভ্যর্থনা কেন্দ্রে, মিলনায়তন, ডে-কেয়ার সেন্টারও পুড়েছে। আগুনে পুড়েছে সেতু ভবনের উপরের ফ্লোরও। লুট করা হয়েছে ভবনের মূল্যবান জিনিসপত্র।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৩০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় ১৭টি গাড়ি। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়, তুলে নেওয়া হয়েছে সড়কবাতি। হামলায় ডিএনসিসির প্রায় ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
হামলাকারীরা মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে এবং বেজমেন্টে থাকা যানবাহনে আগুন দেয়। আগুন দেয়া হয় ভবনেও। এ হামলায় ৫৩টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভবনের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, অফিসের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়েছে।
মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়েছে হামলাকারীরা। টিকিট বিক্রির মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সময়সূচির মনিটর, ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুলশানে ট্রাফিক উপ-কমিশনারের অফিস। এসি রমনা, রামপুরা, মহাখালী ও উত্তরা অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো ঢাকা শহরে মোট ৫৪টি ট্রাফিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআরে হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা আটটি গাড়ি ভাঙচুর করে।