নির্যাতন চালিয়ে গেলো এক যুগে হত্যা করা হয়েছে ২৬৭ জন গৃহশ্রমিককে। আহত ৩৩৫ জন। বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকদের বঞ্চনার জীবনের সাথে কেবল দাসত্বেরই তুলনা চলে। কাজে যোগ দেয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যায় তাদের নাম। তারা হয়ে ওঠেন বুয়া বা খালা। নেই ছুটি বা নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টা। নেই কোনো বেতন কাঠামো। গৃহ শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রশ্নে নব গঠিত কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
গৃহকর্মীদের জীবন যেন দাসত্বের শৃঙ্খলা বন্দী। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই চাকরি। নেই কোনো ছুটি। এই চাকরিতে হারিয়ে যায় নিজের নামটাও। তাদের যেন একটাই নাম বুয়া বা খালা। কথায় কথায় চাকরি যাওয়াসহ চলে শারীরিক নির্যাতন। নেই শ্রমিকের স্বীকৃতি; বলছিলেন দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে হোটেলে রান্নার কাজ করা কল্পনা আখতার।
জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সহসম্পাদক কল্পনা আখতার বলেন, কুকুর-বিড়ালেরও একটা নাম আছে। কিন্তু গৃহশ্রমিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল করা হয়। তাদের নাম ধরে ডাকা হয় না। বুয়া বলে ডাকা হয়। সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই। আমরা বছরে দুই ঈদে বোনাস চাই।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের পরিসংখ্যান বলছে, গেলো ১৩ বছরে মৃত্যু নির্যাতনে ২৬৭ জনকে হত্যা এবং ৩৩৫ জনকে আহত করা হয়েছে। দাসত্বের জীবন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন। নিখোঁজ হয়েছেন দুইজন।
গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন বা হত্যার মতো ঘটনাগুলোর খুব কমই গণমাধ্যমের নজরে আসে। প্রভাবশালীদের ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে কতশত গৃহ শ্রমিকের কান্না। এসব অন্যায়ের প্রতিকারে গৃহশ্রমিক আইনের দাবি জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের।
জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতার বলেন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি হয়েছে, যেহেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং এটা দিয়ে কোনো আইনি সুবিধা পাচ্ছি না। শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন দ্রুত যেন আইন প্রণয়ন করে।
আশার কথা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে একটি সংস্কার কমিশন করেছে। গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে ভাবছে এই কমিশনও।
শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশের গৃহশ্রমিকরা পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত মানুষের অংশ। ২০১৩ সাল থেকে বলছি, শুধুমাত্র নীতি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না। একে আইনের আওতায় এনে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। সচেতনতার আওনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
অভিভাবকদেরও সচেতন হয়ে সন্তানদের গৃহ শ্রমের কাজে দেয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।