ঈদে নিরাপত্তা নিয়ে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। আর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না। ঈদগাহে পড়ে থাকা কোন ব্যাগ না ধরতে এবং ঈদগাহে ব্যাগ, ধারালো বস্তু বা দাহ্য পদার্থ না আনতেও নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে এবার অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য কমেছে বলে দাবি করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী।
রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। মুসুল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে ঈদগাহ প্রাঙ্গণ। শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে খোঁজ নেন সাংবাদিকদের বেতন বোনাসের। জানান নিজের গরু কেনার খবরও। এবারের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে অবশ্য খুব আত্মবিশ্বাসী তিনি।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘পূর্ণ প্রস্তুতি’ থাকার কথা জানন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমি পুরাভাবেই কনফিডেন্ট, আল্লায় দিলে শতভাগ কনফিডেন্ট, যেন কোনো ধরনের কোথাও কিছু না হয়।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আল্লায় দিলে সব ভালো আছে। কোনো ধরনের অসুবিধা নাই। পুরা নিরাপত্তার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী রয়ে গেছে। তারা ছুটিতে যায় নাই, যেন সবার নিরাপত্তা থাকে। প্রতিবার যেমন ভালোভাবে হয়, এইবারও আমরা আশা করতেছি সবকিছু ভালোভাবে হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জায়নামাজও নিয়া আসতে হবে না। আল্লাহর কাছে খালি দোয়া করবেন, যেন বৃষ্টি না হয়। বৃষ্টি হলে জামাতটা বায়তুল মোকাররমে চলে যাবে।
এর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে আসেন ডিএমপি কমিশনারও। জানান, ঢাকার নিরাপত্তায় ডিএমপির ৫০০ পেট্রোল টিম কাজ করবে। জাতীয় ঈদগাহে চারটি পুরুষ ও একটি মহিলা গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় প্রতিটি ঈদ জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান, মহানগর পুলিশ প্রধান শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, মহানগরীর একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না। এ বছর ঢাকা মহানগরে ১১৮টি ঈদগাহ এবং ১৬২১টি মসজিদে ঈদ জামাত হবে।
ডিএমপি কমিশনার জানান, জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এখানে একত্রে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। জামাতে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, অন্যান্য বিচারপতি, ঢাকায় কর্মরত মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম এবং অন্যান্য স্থানে ঈদের জামাত ঘিরে সমন্বিত ও বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও ম্যানুয়াল তল্লাশি। ডিবি, সিটিটিসি, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে।
ঈদগাহ এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন ও সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত নিকটস্থ পুলিশ সদস্যকে জানানোর অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।
নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা, প্রবেশপথ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশে এলাকা পুলিশের সুইপিং টিম দিয়ে ইতোমধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাতে ৫০০ পেট্রোল টিম ও দিনে ২৫০ পেট্রোল টিম মাঠে থাকবে। এছাড়া গাড়ি পেট্রোল, ফুট পেট্রোল ও মোবাইল পেট্রোল চলমান থাকবে। পুলিশের অফিসারদের দায়িত্ব ভাগ করে মাঠে নামানো হয়েছে। সব এলাকায় থাকবে চেকপোস্ট ও তল্লাশির ব্যবস্থা। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার ঈদ জামাতে অংশ নিতে যাওয়া মুসল্লিদের ব্যাগ, ধারালো বস্তু বা দাহ্য পদার্থ না আনতে অনুরোধ করেন। জামাত শেষে সুশৃঙ্খলভাবে বের হওয়ার অনুরোধ জানান। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে ৯৯৯ অথবা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানাতে বলেন। তিনি আরও বলেন, নগরবাসীকে অনুরোধ করবো, ডিএমপির দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করুন। কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় রাখুন।
দুপুরে জাতীয় ঈদগাহ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও র্যাব বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারাদেশে নজরদারিও বাড়িয়েছে র্যাব।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী তালিকাভুক্ত ঈদ জামাতের স্থানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদ, শোলাকিয়া ঈদগাহ, দিনাজপুর বড় ঈদগাহ ও দেশের অন্যান্য ঈদগাহে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা সুইপিং করা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল পেট্রোল, অবজারভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট এবং সিসিটিভি মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছে।
ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করার জন্য সব বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি, মলম পার্টি, চাঁদাবাজি এবং ছিনতাই রোধকল্পে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নজরদারি ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা অভিমুখী পশু বহনে চাঁদাবাজি রুখতে প্রতিটি হাইওয়েতে র্যাবের নিয়মিত টহল ও নজরদারি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ শপিং মল, বিপণী বিতান এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্ট্যাটিক টহল বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে; যাতে করে সাধারণ জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে এবং নিরাপদে কেনাকাটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষের বাসস্থান, কর্মস্থল, শপিংমলসহ অন্যান্য স্থানে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে র্যাবের নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।