কেকেই মাতৃভূমির ছবি আঁকেন তাসনুতা আলম। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কেক ইন্টারন্যাশনাল থেকে জয় করেছেন স্বর্ণপদক। এখন অনলাইনে নানা দেশের শিক্ষার্থীদের কেককৌশল শেখান তাসনুতা।
এক সময় মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কেক বানানো শিখেছেন ব্রিটেন প্রবাসী তাসনুতা আলম। এখন মেয়ের পারদর্শিতায় মুগ্ধ হন মা।
শখের বশে বানানো কেকই যে তাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাবে, তা কখনো ভাবেননি। একান্ত ইচ্ছা আর একাগ্রতা তাকে বানিয়েছে কেক মাস্টার।
তাসনুতা আলম জানান, ছোটবেলায় মায়ের হাতে বানানো কেক খেতে খুব মজা লাগতো। সেই মজা লাগার স্বাদই কেন বানানোর প্রতি আগ্রহী করে তোলে তাকে।
১৫ বছর আগে স্বামীর সাথে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন তাসনুভা। বিদেশে স্বামী, সংসার আর সন্তান সামলে চাকরি করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু শুধু ঘরে বসে থাকতেও নারাজ ছিলেন তিনি।
কিছু করার তাড়না থেকেই পরিচিত মানুষদের বিয়ে, জন্মদিনের মতো নানা অনুষ্ঠানে কেক বানিয়ে সরবরাহ করা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: চিরঘুমে গীতিকার ও জ্যোতিষী কাওসার আহমেদ
একদিন বন্ধুর পরামর্শে কেক তৈরির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। সেই থেকে শুরু। এখন পর্যন্ত ৩০টি দেশে কেক কলাবোরেশনে ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন তাসনুতা।
আন্তর্জাতিক আসরে তার যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে, কেক ইন্টারন্যাশনাল বার্মিংহাম প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক জয় দিয়ে। ২০১৮ সালে একই প্রতিযোগিতায় পেয়েছেন দুটি ব্রোঞ্জ।
আর ২০১৯ সালে কেক ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করে চার ক্যাটাগরিতে একাধারে দুটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন তিনি।
কেক ইন্টারন্যাশনাল থেকে স্বর্ণপদক জয় করেছেন তিনবার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পালন করেছেন কেক ইন্টারন্যাশনালের অফিসিয়াল প্রতিনিধির দায়িত্ব।
যুক্তরাজ্যের এবারডিন শহরজুড়ে তার কেকের সুনাম। কেকের জমিন আর নকশায় বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন তিনি। বহু দেশের কেক আর্টিস্টরা এখন তাসনুতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চেনে।
শিল্পীর ক্যানভাসের মতো কেকই তার ক্যানভাস। মনের ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে থাকেন কেকের গায়ে। শুরুতে কষ্ট হলেও নিয়মিত অনুশীলনের পর ভালোই রপ্ত করেন কারুকাজের দক্ষতা।
কেকের গায়ে যা ইচ্ছে তাই ফুটিয়ে তুলতে পারলেও তিনি তা করেন না। কেক বানানোর সময় এখন মাথায় রাখেন দেশের কথা।
দেশের ঐতিহ্য খুব দক্ষতার সঙ্গে তিনি কেকের গায়ে ফুটিয়ে তোলেন। এখানেই তার ভিন্নতা। আর এ ভিন্নতাই আকৃষ্ট করে দর্শক, প্রতিযোগী ও বিচারকদের।
বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদেরও কেক বানানোর কৌশল শেখান তিনি। এমনি বাংলাদেশে এসেও বেশ কয়েকটি কেক তৈরির কর্মশালা করিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, কেক বানানো অথবা এটাকে প্রধান পেশা হিসেবে সামনে এগোনোটা ছিল তাসনুতার চিন্তার বাইরে। এক বন্ধুর উৎসাহে ২০১৩ সালে খোলেন বিজনেস পেজ- কেক টপারস।