মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের দায়ের করা মানহানির মামলা চলবে বলে জানিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ রায়ের ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও বাংলাদেশে তার বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের ও হত্যার দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও তার সহযোগী আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান চৌধুরী মুঈনুদ্দীন।
২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মুঈনুদ্দীনের দণ্ডিত হওয়া ও একাত্তরে তার যুদ্ধাপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি তুলে নেওয়ার দাবিতে চিঠি দিয়ে সারা না পেয়ে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন মুঈনুদ্দীন। সেই মামলা খারিজ করে দিলে আপিল করেন এই আলবদর নেতা।
গেলো ২০ জুন ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ফলে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মুঈনুদ্দীনের দায়ের করা মামলাটি চলবে। এই রায়ের ফলে যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা আরও জটিল হলো।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজিক ফোরামের ট্রাস্টি রায়হান রশীদ বলেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যে আন্দোলন, আমি মনে করি সে আন্দোলনটি একটা নতুন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তটির কারণে।
যুক্তরাজ্যের রায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এটি আগামীদিনে সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিন্তু অনেকগুলো রায় দিয়েছে। সে রায়গুলোকেও এখন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হবে, যুক্তরাজ্যের আদালতের রায়কে রেফারেন্স পয়েন্ট দেখিয়ে।
এই রায়ে হতাশা জানিয়ে তা শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা বলছেন আরো আগেই তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিলো।
প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি আসিফ মুনীর বলেন, যুক্তরাজ্যের চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও আরেকজন যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান। তাদের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো সঠিক বা কার্যকরী পদক্ষেপ দেখেনি।
দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে রায়টি পর্যালোচনা করে সরকারকে একটি কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণের পরামর্শ তাদের।