নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির জমা দেয়া প্রতিবেদনকে অস্পষ্ট এবং অসন্তোজনক বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ প্রতিবেদন সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদন সম্পর্কে আদালত বলেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের পর আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছিল কি না- সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে আদালত এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।
১৪ আগস্ট নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন। এর আগে ১৩ জুন প্রতিবেদন দাখিলে দুই মাসের সময় বেঁধে দেয় হাইকোর্ট।
গত পাঁচ এপ্রিল সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কমিটিতে জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়।
মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এই রুলের শুনানি হবে ২৯ নভেম্বর। হাইকোর্টের আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
গত ২৮ মার্চ র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদি করা হয়।
এদিকে গত ২৮ মার্চ হাইকোর্টের একটি সূত্র জানায়, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। এর দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এদিকে সুলতানার স্বজনরা অভিযোগ তোলেন, আটকের পর নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, আটকের পরপরই সুলতানা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আটকের পর তাকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়াই হয়নি। পরে তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃতুর আগ পর্যন্ত সুলতানার স্বজনরা সঙ্গে ছিলেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রামেকে সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পারেন মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে সুলতানার মৃত্যু হয়েছে।
র্যাব জানায় সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়।
গেল ২৪শে মার্চ নওগাঁয় রেবের হাতে আটকের পর সুলতানা জেসমিন নামের ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩শে জুলাই ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় আদালত। ৬০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। সেইসাথে সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেয়ার ঘটনা কেন অবৈধ হবেনা করা হবেনা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। ২৯শে নভেম্বর এই রুলের উপর শুনানি হবে।