নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। নতুন এই দলের সঙ্গে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সরব আলোচনা রয়েছে।
শর্ত হিসেবে জেলা ও উপজেলা কমিটির তালিকা কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি। দলটির কার্যক্রম সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে না চাইলেও, জামায়াতে ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁদ।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলছেন, শর্ত মেনে যে কেউই নতুন দলের নিবন্ধন চাইতে পারেন। এ সময় তিনি স্পষ্ট করে জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ আবেদন করলে তাদের নিবন্ধন দেবে না কমিশন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোনঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত থেকে বেরিয়ে কয়েকজন নেতা কয়েক বছর আগে ‘এবি পার্টি’ নামে দল গঠন করে। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে তারা কিছু দিন আগে ইসিতে আবেদন করেন।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সকাল থেকেই গুঞ্জন ছিলো আদালতের আদেশে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামি ভিন্ন নামে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছে। দুপুরের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনে আবেদন নিয়ে আসে পাঁচটি রাজনৈতিক দল।
এই দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক লীগ, বিডিপি ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।
বিডিপি নেতারা জানান, নিবন্ধনের সব শর্তই পূরণ করেছেন তারা। ৫০ হাজার পাতার তথ্যসহ নির্বাচন কমিশনে আসে বিডিপি। যেখানে দেশের প্রতিটি জেলা কমিটির তথ্য দিয়েছে দলটি।
কিন্তু কবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলো; কবে বা কোন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জেলা উপজেলার এসব কমিটি হলো, কারা সেই নেতা; এসব কোন তথ্যই দিতে রাজি নন দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁদ।
আনারস প্রতীক চাওয়া দলটির জামায়াত ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বিডিপির অনেকে জামায়াতে যুক্ত রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভুল। আমি যাই না, অনেক বছর হয়েছে। কত বছর যাই না, আমি নিজেও জানি না।
তাহলে জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করছেন কি না- এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান বিডিপি সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করব। আমরা নতুন দল। অন্য কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি বা কোনো সহযোগিতা ফিল করি না।
বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ও সংবিধান মানেন কি না- এমন প্রশ্নে আনোয়ার বলেন, ১০০ পার্সেন্ট। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই রাজনীতিতে এসেছি। সংবিধানের প্রতিটি শব্দকে সম্মান করি এবং লালন করে রাজনীতি করি। সংবিধানের বাইরে কিছুতেই যেতে রাজি না।
যুদ্ধাপরাধী কেউ আছে কি না- এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বানালে বানাতে পারে, আমরা এসব বিষয়ে যাব কেন? আমাদের সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি দাবি করেন, নতুন প্রজন্মের অনেকে রয়েছেন তাদের সঙ্গে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে অনেক কথা শুরু হয়ে গেছে। আমরা প্রত্যাশা করিনি। খুব তাড়াতাড়ি বিস্তারিত জানাব। তিনি বলেন, সব শর্তপূরণ করে নিবন্ধন আবেদন জমা দিয়েছি; আশা করি, নিবন্ধন পাব।
নুতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি, সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় সবটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়।
মোট ২৬টি দল এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য কমিশনে আবেদন করেছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন পাবার কোন সুযোগ নেই। তবে জামায়াতের কোন নেতা যুদ্ধাপরাধী না হলে এবং শর্তপূরণ করে আবেদন করলে ভিন্ন নামে নিবন্ধন পেতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজে দফতরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন কোর্টের আদেশে বাতিল করা হয়েছে। কেউ নিবন্ধিত হতে চাইলে তাকে নতুন করে নিবন্ধিত হতে হবে।
কমিশনার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ আবেদন করলে তাদের নিবন্ধন দেবে না কমিশন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই।
একাত্তর/এআর