শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিওবার্তা দিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক ভিডিও বার্তায় তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার বিষয়টি বোঝাতে পারেননি উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সুমন বলেন, আপনারা যারা আমার সমর্থক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী বিভিন্ন সময় নানাভাবে আমার ওপর কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশে একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই। এই কোটা সংস্কার বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে সবসময় ছিলাম আমি। এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের পক্ষেও আমি ছিলাম। কিন্তু আমার ব্যর্থতা হচ্ছে আপনাদের সেটি বোঝাতে পারিনি। এ জন্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতার জন্য সব সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তাদের সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আপনারা এখন যে কাঠামোগত সংস্কার চাচ্ছেন, এই সংস্কারের জন্য দীর্ঘ বছর আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছি আমি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গত ১৫ বছরে যে দুই-তিনজন মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাদের মধ্যে হয়তো আমাকে একজন পাবেন। আমি এস আলমের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে টাকা পাচারের জন্য মামলা করেছি।
‘আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যিনি প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আমেরিকাতে তার ৯টি বাড়ি থাকা নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে দুদকে মামলা করেছি। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে আমি বক্তব্য দিয়েছি। কর কমিশনার মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে মামলা করেছি, ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন সম্পর্কে কথা বলেছি। ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আমি নিজে মামলা করেছি, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার ৮ বছরের সাজা হয়েছে।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আপনারা জানেন, আমার জীবনে কত ঝুঁকি ছিলো। কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে বাধ্য হয়েছি, জিডি করেছি যে আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এই যুদ্ধে সবসময় আমি চেষ্টা করেছি। এখন আপনারা যে যুদ্ধ শুরু করেছেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এই যুদ্ধে সবসময় আমি দোয়া করি। এই যুদ্ধে সবসময় আমার জায়গা থেকে শরিক থাকার চেষ্টা করবো।
শেষে তিনি বলেন, ভালো থাকুক আমার বাংলাদেশ, ভালো থাকুন সবাই।
বিভিন্ন সময় নানা সামাজিক ইস্যু নিয়ে ফেসবুকে কথা বলে আলোচনায় উঠে আসেন ব্যারিস্টার সুমন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে নির্বাচিত হন তিনি।
গত ৪ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আর দেখা যায়নি ব্যারিস্টার সুমনকে। তিনি বাংলাদেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন সে বিষয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করে।