‘পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই, আমাকে ভালো কিছু করতেই হবে, সেরা পারফরমেন্সটা দিতে হবে’ -এমনটাই বলছিলেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল টিম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলতে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানজিদা আক্তার।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নারী ফুটবল টিমের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে প্র্যাকটিস সেরেছেন সানজিদা। খেলেছেন একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচও, সেই ম্যাচটিতে দল জিতেছেও। দলে সানজিদার পারফর্মেন্স নিয়ে অনেকেই খুশি।
সেদিনের ম্যাচ শেষে অনেকেই এগিয়ে এসে সানজিদার সাথে সেলফি তোলেন। বিষয়টি বেশ ভালো লেগেছে তার। তবে ফুটবল যেহেতু একটি দলগত খেলা তাই কেবলমাত্র তাকে ভালো খেললেই হবে না, দলকেও দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে বলে মনে করেন সানজিদা।
তিনি বলেন, জার্নি করে নতুন জায়গা এসেও আমি স্বাভাবিকভাবে খেলেছি। দলের অনেকেই আমার খেলার প্রশংসা করেছেন। খেলা শেষে অনেকে সেলফি তুলেছে।
৩০ জানুয়ারি পরবর্তী ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল দল। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচের আগেই খেলোয়াড়দের যে মানসিক চাপ নিতে হয় তা নিয়ে সানজিদার বক্তব্য ‘এত চাপ নিয়ে তো খেলোয়াড়রা খেলতে পারে না, তবুও চাপ নিতে হয়। যেহেতু আমি এখানে এসেছি, আমি চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেওয়ার। ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে এর আগেও আমাদের বাংলাদেশ থেকে অনেক প্লেয়ার খেলতে এসেছেন, তাদের রেকর্ডও আছে। এর সাথে আমার দেশের সুনাম জড়িত। সেটা আমি রক্ষা করার চেষ্টা করবো। তাছাড়া আমার পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই, ভালো কিছু করতেই হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেন্ট জেমস স্কুল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সানজিদা।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে অনেক খ্যাতনামা বাংলাদেশের খেলোয়াড়ই খেলে গেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম তারা খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল (১৯৮৬), মোনেম মুন্না (১৯৯১ ও ১৯৯৩), রিজভী করিম রুমি (১৯৯১), গোলাম মোহাম্মদ ঘাউস (১৯৯১), শেখ মোহাম্মদ আসলাম (১৯৯১), রাকিব হোসেন (১৯৯৫) ও মিনাজুর রহমান (১৯৯৫)।
দেশ স্বাধীনের আগেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলে গেছেন, তবে নারী বিদেশি ফুটবলার এই প্রথম।
একজন নারী বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগদান প্রসঙ্গে সাজিদা বলেন, ইস্টবেঙ্গলের পুরুষ টিমে আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই খেলে গেছেন, এর ইতিহাসও আছে। কিন্তু একজন বিদেশি হিসেবে ইস্টবেঙ্গলের নারী টিমে এই প্রথম আমি যোগদান করেছি, অনেক ভালো লাগছে। বিশেষ করে নারী ফুটবলারদের কাছে গর্বের বিষয় এটি।
সানজিদা বলেন, আমাদের দেশে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনেক ফ্যান-ফলোয়ার আছে। আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগে যেভাবে আমাদের দেশে এটা নিয়ে মাতামাতি হয়েছে তা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, রাইট উইংগার হিসেবে খেলা ২২ বছর বয়সী সানজিদা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক সব বিভাগে কৃতিত্বের সাথে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৮ ও অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা সানজিদা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়।
২০২২ সালে বাংলাদেশের সাফ ওমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে সানজিদার অবদান অনস্বীকার্য।
নতুন ক্লাবে নিজের ও দলের পারফরমেন্স নিয়ে সাজিদা বলেন, ফুটবল দলগত খেলা, একা ভালো খেলে কেউ দলকে জেতাতে পারে না। দলের বাকি খেলোয়াড়রা তাদের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমিও ভাল কিছু করার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে বসুন্ধরা কিংস নারী দলের খেলোয়াড় সানজিদা জানান, বাংলাদেশ ফুটবল অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো ফুটবলার আছে। আমার মনে হয় পরবর্তীতে আরও অনেক খেলোয়াড়ই বিদেশের মাটিতে খেলতে যাবে। আমাদের দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ভারতীয় মহিলা লীগ ক্লাব কিকস্টার্টে খেলছেন, আমি নিজে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলছি।
তার মতে, ‘আমার কখনোই মনে হচ্ছে না যে আমি বিদেশে এসে খেলছি, কারণ এখানকার ভাষা এক। আসলে ফুটবলের ভাষা বিশ্বজুড়েই এক।’
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তাদের থেকে সব রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা সানজিদা।