ফুল! দুই বর্ণের একটি শব্দ হলেও ফুলের সঙ্গে মানুষের পরিচয় সভ্যতার শুরু থেকে। জাত-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে সমান প্রিয় ফুল। প্রকৃতি থেকে শুরু বাসা-বাড়ির ভেতরে-বাইরে সব খানেই শোভাবর্ধন করে আসছে ফুল। গন্ধ, বর্ণ, স্নিগ্ধতায় ফুল সুন্দর। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য্যকে তুলনা করা যায় ফুলের সঙ্গে।
ফুল কে না ভালোবাসে! শখ করে ফুলের বাগানও করেন অনেকে। আনন্দ উৎসবের সঙ্গী যেমন রং-রঙিন ফুল, তেমনি শোক জানাতেও ব্যবহার করা হয় ফুল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও ফুলের ব্যাপক ব্যবহার হয়। আবার উপলক্ষের ভিন্নতায় কখনও দরকার হয় রঙিন ফুল, কখনও আবার প্রয়োজন হয় সাদা ফুলের।
বেশিরভাগ ফুলেরই থাকে মন মাতানো গন্ধ। তাই কবি বলে উঠেন, ফুলের গন্ধ ঘুম আসেনা। দিনের বেলায় ফোটা ফুলগুলো দেখতে ভারি সুন্দর আর বর্ণিল হলেও রাতের বেলায় ফোটা ফুলের রঙ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা হলেও গন্ধ ছড়ায় বেশি। তাই বেলি-হাস্নাহেনার মতো সাদা ফুলগুলো গন্ধের মৌতাত ছড়াতে থাকে।
ফুলে মধুও থাকে। কিন্তু ফুল সুগন্ধ কোথায় পায়? উত্তর শুনলে একটু অবাকই হতে পারেন সবাই। কারণ বিজ্ঞান বলছে, ফুল তার নিজের জন্যই গন্ধ তৈরি করে। কিছুটা স্বার্থপর শোনালেও এটাই সত্যি। বর্ণে-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে কীট-পতঙ্গ, মৌমাছি ও প্রজাপতি ফুলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এর উপর বসে।
পরে এক ফুল থেকে যখন অন্য ফুলে উড়ে যায় তখন পরাগরেণু বয়ে নিয়ে যায় অন্য ফুলে। এভাবে ফুলের পরাগমিলন ঘটায়। এর ফলেই সৃষ্টি হয় ফল বা বীজ। এভাবে বংশবৃদ্ধি করে গাছ-পালা, গুল্ম-লতা। অর্থাৎ ফুল উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে নিজেকেও বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ।
কীট-পতঙ্গ মধু সংগ্রহের জন্যও ফুলের উপর এসে বসে। এই সময় ফুলের পরাগধানী থেকে পুং রেণু পতঙ্গের গায়ে লেগে যায়। কোনও পতঙ্গ যখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে গিয়ে বসে, তখন পতঙ্গের শরীরে লেগে থাকা রেণু অন্য ফুলে ছড়িয়ে পড়ে ও পুরুষ ফুলের রেণুর সঙ্গে স্ত্রী ফুলের মিলন ঘটে।
প্রতিটি ফুলে এক ধরনের তেল জাতীয় পদার্থ থাকে। ফুলভেদে ওই তেলের গন্ধও ভিন্ন হয়। সেই তেল যখন বাষ্পীভূত হয় তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় আকুল করা গন্ধ। ফুলের পাপড়িতে থাকা বিশেষ ফ্লোরাল টিস্যুর জন্যই ফুল থেকে গন্ধ বের হয়। এই টিস্যু থেকে নিঃসরিত হয় বিভিন্ন ধরনের উদ্বায়ী জৈব যৌগ।
এই জৈব যৌগের সংখ্যা আবার ফুলের প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়। তবে সাধারণত এর সংখ্যা একের চেয়ে বেশি, এমনকি কয়েকশোও হতে পারে। শুধু যে ফুলের মধ্যে এসব জৈব যৌগ থাকে তা কিন্তু নয়, অনেক উদ্ভিদের পাতা ও ডাল-পালাতেও এমন ধরনের জৈব যৌগ থাকতে পারে এবং গন্ধ ছড়াতে পারে।
ফুল তার নিজের জন্য গন্ধ ছড়ালেও, ফুলের গন্ধ মানুষেরও উপকারে লাগে। কারণ গন্ধ মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে৷ কেউ যদি দিনে তিনবার পাঁচ মিনিটের জন্য ঘ্রাণ নেয়ায় মনোযোগ দেয়, তাহলে সেটা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ঘ্রাণ আমাদের অনুভূতিও ঠিক করে দেয়। বাড়িয়ে দেয় রোমান্সের অনুভূতিও।