সেকশন

বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
 

নোবেলের ইতিকথা

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ এএম

পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও-এর নোবেলে শান্তি পুরস্কার জয়ের মধ্যে দিয়ে শেষের পথে চলতি বছর বিশ্বের সম্মানজনক পুরস্কার বিতরণের মৌসুম। সেই ১৯০১ সালে থেকে প্রতি বছর সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল ও অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন বা মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রদান করা হচ্ছে নোবেল পুরস্কার। 

মোট ছয়টি বিষয়ে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় নরওয়েতে। কিন্তু সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্যান্য পুরস্কার সুইডেন থেকে দেওয়া হয়। অক্টোবর শুরু মানে নোবেলের মৌসুম। প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার থেকে ছয় দিনব্যাপী সারাবিশ্বের ছয়জন পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা শুরু হয়। তবে কোন কোন বিষয়ে যৌথভাবেও পুরস্কার দেয়া হয়। 

কিন্তু আমরা কি জানি, কেন সম্মানজনক এই পুরস্কারের নাম নোবেল? সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে প্রদান করা হয় এই পুরস্কার, সেজন্যই এর নাম নোবেল পুরস্কার। আলফ্রেড নোবেল সুইডিশ শিল্পপতি এবং ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। এবার জেনে নেওয়া যাক আলফ্রেড নোবেল সম্পর্কে। 

বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের জন্ম ১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর সুইডেনের স্টকহোমে। পুরো নাম আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল। জন্ম থেকেই ভীষণ রুগ্ন ছিলেন আলফ্রেড। পেটের পীড়া আর হৃৎপিণ্ডের নানা জটিলতা ছিল তাঁর। দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে খেলাধুলায় কোনো উৎসাহই পেতেন না, কোনো বন্ধুও ছিল না তাঁর। 

আলফ্রেডের বয়স যখন চার বছর, তখন তাঁর প্রকৌশলী বাবা ইমানুয়েল নোবেল জীবিকার সন্ধানে পরিবার রেখে চলে যান ফিনল্যান্ডে। সেখানে গিয়েও তেমন সুবিধা করতে না পেরে চলে যান রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। সে সময় ইংল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পাঁয়তারা চলছে। সম্ভাব্য যুদ্ধের বাজারে গোলাবারুদ, মাইন ও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে সাফল্য অর্জন করলেন ইমানুয়েল। এরপর পুরো পরিবার নিয়ে গেলেন সেন্ট পিটার্সবার্গে।  

তরুণ বয়সে কবিতার প্রতি ভালো লাগা থেকে কাব্যচর্চা শুরু করেন আলফ্রেড। বাবা ইমানুয়েল তাঁর এই কাব্যচর্চার কথা জানতে পারেন। ঠিক করেন, ছেলেকে নিজের কারখানার দায়িত্ব দেবেন। তাই প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেন রাশিয়ার বাইরে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন বিশিষ্ট প্রকৌশলী ও রসায়নবিদের অধীনে কাজ শিখে ফিরে এসে আলফ্রেড যোগ দেন বাবার কারখানায়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে রাশিয়াকে গোলাবারুদ সরবরাহ করে অনেক অর্থ উপার্জন করেন তাঁরা। যুদ্ধ শেষে ব্যবসার অবস্থা খারাপ হলে ফিরে যান সুইডেনে। 

আলফ্রেড সুইডেনে ফিরে প্রথমে স্টকহোমে এবং পরে জার্মানিতে রাসায়নিক গবেষণাগার স্থাপন করেন। আগে পুরোনো ভবন ভাঙার জন্য প্রচুর শ্রমিক লাগতো। যা ছিল খুব ব্যয় বহুল। এ ব্যয় কমানোর জন্য ১৮৬৬ সালে নোবেল আবিষ্কার করলেন ডিনামাইট। খুবই কার্যকর এ ডিনামাইট মুহূর্তের মধ্যে ভবন ধ্বংস করতে পারত। উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে কয়েক বছরে তাঁর ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরে। ব্যবসা বিস্তারের পাশাপাশি চলতে থাকে নতুন নতুন উদ্ভাবন। অল্প দিনের মধ্যে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে যান আলফ্রেড।   

জীবনের শেষ সময়গুলো সুইডেনের এই বাড়িতে কাটিয়েছেন আলফ্রেড নোবেল।

নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করলেন ভালো কাজের জন্য। কিন্তু মানুষ এটা ব্যবহার করতে লাগলো অন্য মানুষকে মারার জন্য। যা দেখে নোবেল খুবই আহত হয়েছিলেন। তখন আর তাঁর কিছুই করার ছিল না। নোবেলের অনুশোচনা হচ্ছে, সারাজীবন এত ধনসম্পদ অর্জন করেছেন বিস্ফোরক আর গোলাবারুদ আবিষ্কার ও বিক্রি করে। কিন্তু তাঁর তৈরি মাইন আর ডিনামাইটে কত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছে যুদ্ধের নামে। 

ভবিষ্যতে আরও কত যুদ্ধ হবে। বিশ্বশান্তির জন্য তাঁর কিছু করা দরকার। বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য তাঁর কিছু করা দরকার। সারাজীবন রোগে ভুগেছেন- চিকিৎসার উন্নতির জন্য কিছু করা দরকার। আর সাহিত্য তাঁর মনের খোরাক। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা না জানালে কীভাবে হয়? তিনি উইল তৈরি করলেন। কোনো উকিলের সাহায্য ছাড়াই উইল করলেন। স্বাক্ষর করে রেখে দিলেন নিজের কাজের ডেস্কে।   

১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর ইতালির সান রেমোতে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান চিরকুমার আলফ্রেড নোবেল। মৃত্যুর পর তাঁকে সুইডেনের সোলনা শহরে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর পর দেখা যায়, তিনি তাঁর সম্পদের প্রায় চুরানব্বই শতাংশ উইলের মাধ্যমে দিয়ে গেছেন নোবেল ফাউন্ডেশন গড়ার জন্য। যার আর্থিক মূল্য সে সময় ছিল ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার। ফাউন্ডেশনের দায়িত্বও লেখা আছে উইলে। আর এই উইল কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া হয় নোবেলের বোফোর্স অস্ত্রকারখানার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রাগনার সোহল্‌ম্যানকে।  

আলফ্রেড নোবেলের হাতে লেখা উইল।  

নিজের তৈরি করা সেই উইলে তিনি লিখলেন- আমি, নিম্নস্বাক্ষরকারী, আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল, এই মর্মে স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় ঘোষণা করছি যে, আমার মৃত্যুর পর আমার অর্জিত সম্পদের বিলি-বন্টন সম্পর্কে এখানে বর্ণিত বিবরণই হবে আমার অন্তিম ইচ্ছা।  

সম্পদের একটা অংশ আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজন, প্রাক্তন কর্মচারী এমনকি নিজের বাড়ির প্রাক্তন মালির মধ্যে বণ্টন করে দেবার পাশাপাশি নোবেল ফাউন্ডেশন নিয়ে উইলে তিনি উল্লেখ করলেন, আমার মূলধন যা আমার নির্বাহী কর্মকর্তারা নিরাপদে বিনিয়োগ করেছেন তা দিয়ে একটা তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল থেকে বার্ষিক যে সুদ পাওয়া যাবে তা প্রতি বছর পুরস্কার হিসেবে ভাগ করে দেয়া হবে তাদেরকে যাঁরা আগের বছর মানুষের কল্যাণে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। 

বার্ষিক অর্জিত মোট সুদকে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে: এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক আবিষ্কার বা উন্নয়ন করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি শরীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি কোন আদর্শ স্থাপনের লক্ষ্যে সাহিত্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন; এবং এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে, সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা সৈন্যসংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে, শান্তি সম্মেলনের আয়োজন ও প্রচারের লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি কিংবা সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন।  

পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের পুরস্কার দেবে সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস; শরীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পুরস্কার দেবে স্টকহোমের ক্যারোলিন ইন্সটিটিউট; সাহিত্যের পুরস্কার দেবে একাডেমি ইন স্টকহোম; এবং শান্তি পুরস্কার দেবে নরওয়ের পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের এক কমিটি। এই পুরস্কার দেয়ার জন্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের জাতীয়তার প্রতিবন্ধকতা থাকবে না; স্ক্যানডিন্যাভিয়ান হোক বা না হোক, যোগ্যতম ব্যক্তিই এই পুরস্কার পাবে এটাই আমার ইচ্ছা।  

এছাড়াও তিনি লিখলেন- আমার এই উইলটিই হলো একমাত্র বৈধ উইল। আমার মৃত্যুর পর যদি এর আগে করা কোন উইল খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো বৈধ বলে গণ্য হবে না। সবশেষে আমার বিশেষ ইচ্ছা এই যে, আমার মৃত্যুর পর কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার শিরা কেটে দেখবেন এবং আমার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন। তারপর আমার দেহ কোন শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে।  

আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পর ১৮৯৭ সালে গঠিত হয় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন। ১৯০১ সালের ১০ ডিসেম্বর, প্রথমবারের মতো ঘোষণা করা হয় সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার। আলফ্রেডের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বমানবতার কল্যাণে কাজ করে যাঁরা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তাঁদেরকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতেও যুক্ত করা হয়েছে নোবেল পুরস্কার। 

নোবেলের সব পুরস্কার দেওয়া হয় সুইডেনে। শুধু শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়ে থেকে। আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাতেই এমনটি করা হয়। এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। আলফ্রেড নোবেল বেঁচে থাকার সময় নরওয়ে ও সুইডেন একটি ইউনিয়নে অর্ন্তভুক্ত ছিল। ১৯০৫ সালে যা ভেঙে যায়। 

১৯০১ সালে যখন নোবেল পুরস্কার চালু করা হয়, তখন পদকটি তৈরি করা হত খাঁটি সোনা দিয়ে। কিন্তু ১৯৮০ সাল থেকে পদক তৈরির ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। বর্তমানে নোবেল পদকটি মূলত ১৮ ক্যারেট সবুজ সোনা (ইলেক্ট্রাম) দিয়ে তৈরি এবং এর ওপর একটি পাতলা স্তরে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনার প্রলেপ থাকে। এই পদ্ধতিতে পদকটি দেখতে সম্পূর্ণ সোনার মতো মনে হলেও এটি ভিতরে মূলত সোনার একটি সংকর ধাতু।  

নোবেল পদকের ওজন সাধারণত ২০০ গ্রাম হয়, যার ব্যাস প্রায় ৬৬ মিলিমিটার। নোবেল পদকের ডিজাইন বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং তা বিশেষ দিক নির্দেশনা মেনে তৈরি করা হয়। পদকের একপাশে থাকে নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের ছবি, যেখানে তাঁকে প্রোফাইল ভিউতে দেখা যায়। পদকের অন্যপাশে, পুরস্কার অনুযায়ী বিভিন্ন নকশা থাকে। যেমন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের পদকে দুইজন ব্যক্তি করমর্দনরত অবস্থায় থাকে, যা শান্তির প্রতীক। 

অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন ও নির্বাচন পদ্ধতি বেশ দীর্ঘ এবং কঠোর। নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট মনোনয়নপত্র রয়েছে। গোটা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ৩০০০ জনকে এই মনোনয়নপত্র দেয়া হয়, যাতে তারা তা পূরণ করে পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারে। নোবেল শান্তি পুরস্কার নির্বাচনের জন্য এমন সব ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়, যারা এ বিষয়ে বিশেষ কর্তৃত্বের দাবিদার।

যে বছর পুরস্কার প্রদান করা হবে ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রদানের শেষ তারিখ। নোবেল কমিটি তাদের মধ্যে সম্ভাব্য ৩০০ জনকে মনোনীত করে। মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয় না, এমনকি তাদেরকে জানানোও হয় না যে তারা মনোনীত হয়েছেন। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথা হিসেবে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার থেকে শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। 

সকল পুরস্কার শুধুমাত্র জীবন্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়ে থাকে। যদি শান্তি পুরস্কার দেওয়া না হয় তবে তার অর্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য পুরস্কারে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। যা এ যাবৎকালে ১৯ বার ঘটেছে।   

নোবেল কমিটির সম্পূর্ণ আলোচনা সর্বদাই গোপন রাখা হয়। এমনকি গোপন রাখা হয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকাও। ‘৫০ বছরের গোপনীয়তা নিয়ম’ অনুযায়ী, পঞ্চাশ বছর পর মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।  

বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পদক বিজয়ী হয়েও অনেকের সেটা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই পুরস্কার স্বেচ্ছায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ফরাসি লেখক জ্যঁ পল সার্ত্রে, যিনি ছিলেন অস্তিত্ববাদের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ। তাঁকে আধুনিক অস্তিত্ববাদের জনকও বলা হয়। ১৯৬৪ সালে, তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলেও, তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, সার্ত্রে নোবেল পুরস্কারকে 'বুর্জোয়া পুরস্কার' অর্থাৎ পুঁজিপতিদের পুরস্কার বলে মনে করতেন।

এরপর ১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার যৌথভাবে দেয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং ভিয়েতনামের জেনারেল এবং কূটনীতিক লে দুক তাও-কে। কিন্তু লে দুক তাও পুরস্কারটি গ্রহণ করেননি। কারণ তার মতে ভিয়েতনামে তখনও শান্তি ফেরেনি। ১৯৫৮ সালে মস্কোর ঔপন্যাসিক ও কবি বরিস পাস্তারনাক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। প্রাথমিকভাবে এই সম্মান গ্রহণ করলেও তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের চাপের মুখে পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হন এই লেখক। এছাড়া, জার্মান নাগরিকদের জন্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৯৩৭ সালে তৎকালীন চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলার একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন।

এর আগের বছর জার্মান শান্তিকামী কার্ল ভন ওসিয়েৎস্কিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। একে পরে লজ্জাজনক ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেয় জার্মান সরকার। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৩৮ সালে জৈব রসায়নবিদ রিশার্ড কুন, ১৯৩৯ সালে জৈব রসায়নবিদ অ্যাডলফ বুটেনান্ড এবং ১৯৩৯ সালে প্যাথলজিস্ট ও ব্যাকটিরিওলজিস্ট গেরহার্ড ডোমাক- এই তিন বিজ্ঞানী প্রথমে পুরস্কার গ্রহণ করতে না পারলেও পরবর্তীতে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ডিপ্লোমা সনদ ও মেডেল হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা পুরস্কারের অর্থ পাননি।

এদিকে, ২০১৭ সালে প্রখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলানের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। একাধিকবার নোবেল কমিটি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি পুরস্কার সংগ্রহ করতে সুইজারল্যান্ডে যাননি। এমনকি নোবেল অর্থমূল্য নেওয়ার জন্য যে বক্তৃতাটি দিতে হয়, সেটিও দেননি তিনি। আবার পুরস্কার প্রত্যাখ্যানও করেননি। তবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের তিন মাসেরও বেশি সময় পর তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেন।  

প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১০ তারিখ বিজয়ীর হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের একটি সনদ ও একটি স্বর্ণপদক এবং নগদ অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল মারা যান। সেজন্য এই তারিখেই বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ও গৌরবের নোবেল পুরস্কার। আর এই পুরস্কার বিজয়ীদের বলা হয় নোবেল লরিয়েট।        

আরবিএস
ইলহা দা কুইমাদা গ্রান্ডে। লাতিন অঞ্চলের নৈসর্গিক এক দ্বীপের নাম। এর নামটি যেমন অদ্ভুত, তেমনি এই দ্বীপ নিয়ে রয়েছে অপার রহস্য। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দ্বীপটি।...
ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মামলার আসামি পাথর নিক্ষেপকারী একজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে তদন্তের স্বার্থে তার পরিচয় জানানো হয়নি।
সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় একটি বাসায় আগুনের ঘটনায় দগ্ধ আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শিশুসহ মৃত্যু হলো দুই জনের।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা ২০২৫’ উপলক্ষে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে।
বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশার এপিএস ও খাদ্য পরিদর্শক অচীন কুমার দাসের ২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত