রাজধানীর ৮০ ভাগ এলাকাই কংক্রিটের দখলে। জলাশয় আছে মাত্র ৮ ভাগ। এতে সূর্যের তাপ শোষণ করতে পারছে না এই নগর। ফলে রাজধানী হচ্ছে উত্তপ্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন রাজধানীকে বসবাসের অযোগ্য শহর বানিয়ে ফেলেছে। পরিবেশবান্ধব নগরী গড়তে ব্যর্থ সব সরকারি সংস্থাই।
চারদিকে শুধুই ইট-পাথর। নেই কোন সবুজের উপস্থিতি। নেই কোন জলাশয় আর খাল বিল। কংক্রিটের দাপটে উত্তপ্ত নগর এখন ঢাকা। স্বাভাবিক তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙ্গে গেলো ৪৪ বছরের মধ্যে রাজধানীর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। নগরীতে কোন সবুজ বেষ্টনী না থাকার কারণেই দুঃসহ এই তাপদাহ।
কিন্তু ঢাকার চার নদী আর কয়েকশ’ খালবিলের এই রাজধানী হতে পারতো একটি শীতল ও পরিবেশবান্ধব নগরী। কিন্তু এর কোনোটাই করা হয়নি। কথা ছিলো ড্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর সবুজ ও জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। কিন্তু সেটাও হয়নি।
গাছ কাটা পুকুর আর জলাশয় ভরাট করা, খোলা মাঠ দখল করে বড় বড় ভবন নির্মাণ। সবমিলে বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এই শহর। উন্নয়নের নামে পার্কগুলোও অকেজো করে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শহরকে শীতল করার উপকরণগুলো ধ্বংস করে বরং উত্তপ্ত করার উপকরণই বাড়ানো হচ্ছে। একটি আধুনিক শহর গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে সবগুলো সরকারি সংস্থা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, মূল ঢাকার ৮০ শতাংশ ভূমি কংক্রিটে আচ্ছাদিত। যাদের ওপর দায়িত্ব ছিলো, তারা ব্যর্থ হয়েছে। পরিকল্পনা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
গবেষকরা বলছেন, ইট পাথর সূর্যের তাপ এখন আর শোষণ করতে পারছেনা এই নগর। ফলে তাপ ফিরে আসছে ভূখণ্ডে। সে কারণেই এই নাভিশ্বাস পরিস্থিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান মনে করেন, বনায়ন কমে- কংক্রিটের ব্যবহার বাড়াতেই এমন সমস্যা।
নগরবিদদের মতে, রাজধানী ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। নগর থেকে জনসংখ্যার চাপও কমাতে হবে।
অপরিকল্পিত এই নগরে বাধাহীনভাবে বায়ু প্রবেশ ও বের হবার সুযোগও রাখা হয়নি। সুউচ্চ ভবনে ঢেকে দেয়া হয়েছে নগর।