ঋণখেলাপির দায়ে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রোববার দুপুরে নোয়াখালীর ছয়টি আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ তথ্য জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণ বর্তমান সংসদ সদস্য।
আবদুল মান্নান একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে সংসদে যান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ী মামুনুর রশিদ কিরণ একজন ঋণখেলাপি ছিলেন। তাই তার মনোনয়নপত্র আইন অনুযায়ী বৈধ বলার সুযোগ নেই।
মামুনুর রশিদ কিরণের দাবি তার প্রতিষ্ঠানের নামে যতগুলো ঋণ আছে তার সবগুলোই নিয়ম অনুযায়ী হালনাগাদ আছে। তার কাছে সব কাগজপত্রও রয়েছে।
তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করবেন বলেও জানান।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নোয়াখালী-৩ এই আসনে মোট ১১জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণসহ চার জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। অন্যরা হলেন, জাসদের জয়নাল আবদীন, স্বতন্ত্র আবুল কাশেম ও মনিরুল ইসলাম।
এ আসনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন- জাকের পার্টির মো. বাহার উদ্দিন, স্বতন্ত্র মিনহাজ আহমেদ, স্বতন্ত্র ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. সুমন আল হোসাইন ভূঁইয়া।
এছাড়া বিভিন্ন কারণে তিনজনের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। এরা হলেন, স্বতন্ত্র আক্তার হোসেন ফয়সাল, জাতীয় পার্টির ফজলে এলাহী সোহাগ ও সাম্যবাদী দলের মহিউদ্দিন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান আরও জানান, নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন।
তাদের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় যাচাই-বাছাই শেষে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
কুলা মার্কার প্রার্থী মান্নানের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মো. আবু সুফিয়ান খান জানান, তার প্রার্থীর সব মামলা স্থগিত এবং ঋণ হালনাগাদ রয়েছে। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে।
এ আসনে বাতিল হওয়া অন্য প্রার্থীরা হলেন- গণতন্ত্রী পার্টির সারওয়ার ই দীন, জাসদের এস এম রহিম উল্যাহ ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. জিহাদ চৌধুরী।
বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত একরামুল করিম চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহীন, জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন আজাদ, জাকের পার্টির মো. সোহরাব উদ্দিন ও ইসলামি ফ্রন্টের মো. আবদুল আলীম।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের ভুল সংশোধন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নির্বাচন কমিশনে আপিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নোয়াখালী-১ আসনে ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের বৈধ, দু্ই জনের বাতিল। নোয়াখালী-২ আসনে ১৩ জনের মধ্যে সাত জনের বৈধ, চার জনের বাতিল ও দুই জনের মনোনয়ন পত্র প্রাথমিক স্থগিত।
নোয়াখাল-৩ আসনে ১১ জনের মধ্যে চারজনের বৈধ, চার জনের বাতিল এবং তিন জনের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। নোয়াখালী-৪ আসনে ৯ জনের মধ্যে পাঁচ জনের বাতিল, চার জনের স্থগিত।
নোয়াখালী- ৫ আসনে পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের বৈধ ও এক জনের স্থগিত এবং নোয়াখালী-৬ আসনে ছয় জনের মধ্যে তিন জনের বৈধ, দুই জনের বাতিল ও একজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।