নিম্নচাপের প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল বঙ্গোপসাগর। এ অবস্থায় শনিবার উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলাসহ অন্য এলাকার এক হাজারের বেশি জেলে তাদের ফিশিং বোটসহ আশ্রয় নিয়েছে সুন্দরবনে।
সুন্দরবনের আলোরকোল, শ্যালা, নারকেলবাড়িয়া, কচিখালীসহ বনের বিভিন্ন নদী ও খালে আশ্রয় নিয়েছেন জেলেরা।
সরেজমিনে উপকূলীয় পাথরঘাটা, মহিপুর, নিদ্রাছখিনা ও শরখোলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঘাটে শতাধিক ফিশিং ট্রলারের সহস্রাধিক জেলেকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
গত ২০ মে থেকে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২৩ জুলাই। নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই হানা দেয় দুর্যোগ। সে সময়ে সাগরে রওনা হয়েও উত্তাল ঢেউয়ে জাল ফেলতে পারেননি জেলেরা। শূন্য ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরতে হয় তাদের। ইলিশ না পাওয়ায় প্রথম ট্রিপেই লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হয় ট্রলার মালিক ও আড়তদারদের। দেড় মাসের মাথায় আবারো দুর্যোগ হানা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
উপকূলীয় জেলে-মহাজনদের দাবি, ৬৫ দিনের অবরোধে (নিষেধাজ্ঞা) মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে তেমন কোনো সুফল হচ্ছে না। নিষিদ্ধ করা সময়ে ইলিশের ভরা মৌসুম থাকে। এসময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশীয় জেলেরা। অথচ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভিনদেশি জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যায়। তাছাড়া মৌসুমের বেশিরভাগ সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাগর থাকে উত্তাল। ঠিকমতো জাল ফেলা সম্ভব হয়না তখন।
শরণখোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মো. দেলোয়ার ফরাজি ও মো. কবির হাওলাদার জানান, পাঁচ মাসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাসই থাকে অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা)। বাকি সময় দফায় দফায় দুর্যোগে সাগর উত্তাল থাকায় ঠিকমতো জাল ফেলা যায় না। ফলে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে পথে বসতে হচ্ছে মহাজন-আড়তদারদের। ভরা মৌসুমে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান তারা।
শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, এখন ইলিশ মৌসুম প্রায় শেষের পথে, এমন সময় দুর্যোগ তাদের জন্য ‘খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নিম্নচাপের কারণে সাগর খুবই ভয়ঙ্কর রূপধারণ করেছে। পাঁচ দিন ধরে সমস্ত ট্রলার ঘাটে অবস্থান করছে। মাছ ধরতে না পারায় এবার খরচ ওঠেনি কোনো মহাজনের।
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মৎস্য সম্পদে তেমন সুফল বয়ে আনছে না দাবি করে আবুল হোসেন বলেন, যখন ইলিশের ভরা মৌসুম তখনই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। এই সুযোগে ভিনদেশি জেলেরা আমাদের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায় প্রতিবছর। তাতে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি।
মৎস্যখাতে একেক জন মহাজনের ট্রলার, জাল ও অন্যান্য সব মিলিয়ে কারো ৩০ লাখ, কারো ৫০ লাখ আবার কারো কারো কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। সব মিলিয়ে মৌসুমের তিন মাস নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের চালান উঠছে না। ফলে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত লাখ লাখ জেলে চরম সংকটে পড়ছে।