সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার কলেজ মোড় হতে আজুগড়া জামাত মোড় পর্যন্ত ওয়াপদা সংরক্ষণ বাঁধের ওপর নির্মিত ক্ষত-বিক্ষত আঞ্চলিক সড়কটি এখন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে না করা যাচ্ছে সংস্কার, আবার এড়ানো যাচ্ছেনা লাখো মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টিও।
এক দপ্তর বলছে, ওরা মাটি দিলে আমরা সড়ক মেরামত করে দেবো। আর আরেক দপ্তর বলছে, যে বাঁধের ওপর সড়ক, সেই বাঁধটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সেখানে আর নির্মাণ কাজ সম্ভব নয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এসব কারণেই ১৭ বছরেও কোনো উন্নয়ন হয়নি সত্তরের দশকে নির্মাণ হওয়া আঞ্চলিক এই সড়কটির। চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে সড়কটিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলাকে বন্যার পানি থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বাঁধটি নির্মাণ করে। ৯০ দশকে বাঁধটির সিংহভাগ নদী গর্ভে বিলীন হয়। পরে পাশেই নতুন করে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর থেকেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে সড়কটি।
সরেজমিন, খানাখন্দের কারণে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরেছে। প্রায় দেড় যুগেও সড়কটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের পুরোটাই ছোট-বড় গর্তে ভরা। বিশেষ কের সোহাগপুর গরুর হাট থেকে শুরু করে জামাত মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের মাটি সরে গেছে। এতে প্রতিদিনই অটোভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
সড়টির যাত্রী, পথচারীরা বলেন, সড়কটি দিয়ে শুধু এই এলাকার মানুষ যাতায়াত করেন বিষয়টি এমন নয়। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই টাঙ্গাইল, চৌহালীসহ নানা উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। এখন সড়কটি অবস্থা এমন যে, পায়ে হেঁটে যেতেই কষ্ট। সেখানে আমরা যানবাহন নিয়ে চলাচল করছি। কতোটুকু ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ছোট-বড় দুর্ঘটনা প্রায় লেগেই আছে।
উপজেলা স্থানীয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, সড়কটি ওয়াপদা সংরক্ষণ বাঁধের ওপর নির্মিত হওয়ার কারণে সড়কটির সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, আমরা ইতিপূর্বে এ সড়কটির কাজ করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। কেননা সড়কটি পানি উন্নয়ন বাঁধের ওপর নির্মিত। আর ওই সড়কের সাইডে মাটি নেই। যেহেতু ওটা ওয়াপদা সংরক্ষণ বাঁধ, তাই তারা যদি সড়কের সাইডে মাটি ভরাট করে দেয়, তাহলে সড়কটি মেরামত করতে পারবো।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জানান, ওই বাঁধটি আমাদের আর সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। আমরা বাঁধটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করেছি। বিকল্প বাঁধ নির্মিত হওয়ায় ওই পুরাতন বাঁধটিতে আর কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে দুই দপ্তরের এই ঠেলাঠেলি মানতে নারাজ স্থানীয়রা। তাদের দাবি, কোনো একটা উপায় বাতলে জনস্বার্থে সড়কটির সংস্কার করা হোক।