সারাবিশ্বের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও। উন্নতমানের মধু রপ্তানিতে অন্যতম ইয়েমেনে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে মধু উৎপাদনের হার। অন্যদিকে, জলবায়ুর বিরূপতার বিরুদ্ধে উচ্চভিলাষী লড়াইয়ে নেমেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। উপকূলে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়ে বাড়াতে চাইছে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের হার।
যুদ্ধবিধস্ত যে ইয়েমেনকে আমরা চিনি, তার খ্যাতি আছে মধু আহরণে। ২০১২ সালে ইয়েমেন সরকারের হিসেবে বছরে মধু আহরণের পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার টন। এ খাতে বার্ষিক রাজস্ব আদায় হতো এক হাজার ৩০০ ইয়েমেনি রিয়াল।
মাত্র দশ বছর পরে জাতিসংঘের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরে দেশটির মধু আহরণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার টনে। আর এ থেকে প্রায় এক লাখ মৌয়ালি এবং তাদের পরিবারের সংসার চলে।
এমন অবস্থার অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। এখন সারা বছরই দেশটির মৌয়ালিরা তাদের বিহাইভস বা মধু চাষের বাক্স নিয়ে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত ছুটে বেড়ান মধু সংগ্রহের আশায়। বলছেন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, হঠাৎ বন্যা, আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এ খাতে।
মধু আহরণকারী আব্দুল ঘানি শামারি বলেন, আমি সারাক্ষণই ছুটছি। গাছের সন্ধানে, মধু উৎপন্ন করে এমন ফুলের সন্ধানে। মাত্রই আবিয়ান প্রদেশ থেকে রাজধানী সানায় এসেছি বৃষ্টির দেখা পেতে।
আব্দুল রহমান আল-হামাতি নামের অপর একজন বলেন, যেসব গাছ মৌমাছির খাদ্য সরবরাহ করে তার বেশিরভাগই কেটে ফেলা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে মধু উৎপাদনে। এটা যে কতটা বিপজ্জনক মানুষ তা বুঝতে পারছে না। পাঁচ বা দশ বছর পর আমরা মধু উৎপাদনকারী নয় বরং মধু আমদানিকারক দেশে পরিণত হবো।
ইয়েমেনের মতো সারাবিশ্বই যখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব দেখছে, তখন এর সাথে উচ্চাভিলাষী এক লড়াইয়ে নেমেছে আরব আমিরাত।
জলবায়ু সম্মেলনের এবারের আয়োজক দেশটি স্বাধীনতার পর থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছ রোপন করে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও এক হাজার কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ রোপনের লক্ষ্য ঠিক করেছে দেশটি।
দেশটির জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, খোর কালবার ১৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৬০০ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ আছে, যা বছরে ৪৩ হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে, কৃত্রিম ম্যানগ্রোভের চেয়ে পুরাতন ম্যানগ্রোভ বনের কার্বণ ধারণ ক্ষমতা বেশি।
প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ হুইটিংটন জোন্সের মতে, কি পরিমাণ ম্যানগ্রোভ রোপন করা হলো সে দিকে নজর না দিয়ে বরং কি পরিমাণ টিকে থাকছে সে দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের মূল্য বাড়িয়ে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র
খোর কালবার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ হুইটিংটন জোন্স বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে দেখেছি ম্যানগ্রোভ বন টিকে থাকার জন্য এখানে খুব সরু এলাকার সঠিক লবণাক্ততা বা তাপমাত্রা রয়েছে।
একাত্তর/আরএ