পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মঙ্গলবার বলেছেন, তার স্ত্রী এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি বুশরা বিবিকে বিষ দেয়া হয়েছিলো। তিনি দাবি করেন, বুশরার ব্যক্তিগত বাসভবনে বন্দী করার সময় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, পরে ওই বাসভবনটিতে সাব-জেল হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
আদিয়ালা জেলে তোশাখানা দুর্নীতি মামলার শুনানির সময় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরান খান বিচারক নাসির জাভেদ রানাকে জানান, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিকে বিষ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বুশরার ত্বকে ও জিহ্বায় রয়েছে চিহ্ন রয়েছে।
ইমরান খান বলেন, আমি জানি এর পেছনে কারা রয়েছে। বুশরা বিবির কোনও ক্ষতি হলে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে দায়ী করা উচিৎ, কারণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ইসলামাবাদে তাঁর বানি গালার বাসভবন এবং রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলো।
৪৯ বছরের বুশরা বিবিকে ডাক্তারি পরীক্ষার আর্জি জানিয়ে ইমরান খান আদালতে বলেন, তিনি ও তার দল আগে যে ডাক্তার পরীক্ষা করেছিলো, তাকে বিশ্বাস করেন না। ইসলামাবাদের শওকত খানম হাসপাতালের ডাঃ অসীমের দ্বারা ডাক্তারি পরীক্ষা করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান।
বুশরা বিবির কথিত বিষক্রিয়ার বিষয়টি তদন্তেরও আহবান জানান তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, আদালত ইমরান খানকে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডির ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
শুনানি শেষে বুশরা বিবি বলেন, ‘আমেরিকান এজেন্ট’ হিসেবে তার নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, একটি টয়লেট ক্লিনার লিকুইডের মাধ্যমে তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই লিকুইডের তিন ফোঁটা তার খাবারে মিশিয়ে দেয়া হতো। ফলে এক মাসের মধ্যে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
বুশরা বলেন, আমার চোখ ফুলে গেছে, আমি আমার বুকে এবং পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব করছি এবং খাবার এবং পানির স্বাদও তেতো লাগছে। আগে মধুতে কিছু সন্দেহজনক পদার্থ মেশানো হয়েছিল এবং এখন আমার খাবারে টয়লেট ক্লিনার মেশানো হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক ফার্স্ট লেডি।
তিনি বলেন, আমার খাবারে কী যোগ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সাব-জেলেরই এক কর্মী আমাকে বলেছিলো। আমি কোনো নাম প্রকাশ করবো না। বুশরা বিবি আদালতকে জানান, তাকে বানিগালা সাব-জেলে শালীন আচরণ করা হলেও, তাকে অল্প সময়ের জন্যও জানালা খুলতে দেওয়া হয়নি।
এর আগে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দাবি করেছিল যে বুশরা বিবিকে তার কারাবাসের সময় বিষাক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছিলো। যার কারণে তার প্রচন্ড পেট ব্যাথার চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো। পিটিআই এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলো, বিষ দেয়া বুশরা বিবির জীবন গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে।
সাধারণ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে গত ৩১ জানুয়ারি ইসলামাবাদের জবাবদিহি আদালত ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। পরদিনই নিয়মবহির্ভূতভাবে বিয়ে করার এক মামলায় প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয় আরেকটি আদালত।
পরে তোশাখানা বেচাকেনার মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে দেয়া ১৪ বছরের কারাদণ্ড স্থগিত করে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। গত বছরের ডিসেম্বরে জবাবদিহি আদালতে তোশাখানা মামলাটি করেছিল জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো- এনএবি।
এতে সৌদি যুবরাজের উপহার দেয়া দুটি অলংকার কম দাম দেখিয়ে তোশাখানা থেকে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল ইমরান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। পরের মাসে ইসলামাবাদের জবাবদিহি আদালত দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
মামলায় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা এনএবি অভিযোগ করেছিল, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি ও তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিদেশি প্রতিনিধির কাছ থেকে সব মিলিয়ে ১০৮টি উপহার গ্রহণ করেছেন।