দখলদার ইসরাইল যদি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় তাহলে তেহরান চুপ করে বসে থাকবে না, বরং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজে হাত দেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদ হাক তালাব।
ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে হামলার ইসরাইলি হুমকির প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। খবর পার্সটুডে ও মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।
আইআরজিসি'র কমান্ডার তালাব বলেন, আমাদের দেশের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। তবে কোনো হামলা হলে ইরানের পারমাণবিক নীতি ও ডকট্রিনে পরিবর্তন আসবে এবং এর আগে ঘোষিত এ সংক্রান্ত আপত্তিকে উপেক্ষা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের হুমকি নতুন কিছু নয়। অবৈধ ইসরাইল বহু বছর ধরেই এ ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এর আগে ইরানের পারমাণবিক শিল্পের বিরুদ্ধে নাশকতা চালিয়েছে এবং সন্ত্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
যদিও আন্তর্জাতিক প্রটোকল ও নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার আইন ও বিধি অনুযায়ী বিশ্বের যেকোনো দেশের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও ইরান প্রথম থেকেই এসব হুমকি মোকাবেলায় জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিলো এবং এখনও প্রস্তুত রয়েছে।
জেনারেল তালাব বলেন, সম্প্রতি ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী সিরিয়ায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগে হামলা চালিয়ে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। এরপর তারা পরমাণু কেন্দ্রে হামলার মতো কোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা সর্বোচ্চ নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দিক-নির্দেশনায়, সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী সন্তানদের প্রচেষ্টায়, প্যাসিভ ডিফেন্স পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অতি উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি পারমাণবিক কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোর অবস্থানগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো হুমকি মোকাবেলা করব ও আমরা এ জন্য পূর্ণ প্রস্তুত আছি।
তেল আবিবকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রগুলোকে আমরা চিহ্নিত করে রেখেছি এবং চরম আঘাত হানার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে রয়েছে। তাই, ইসরাইল যদি ইরানে হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায় তাহলে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার জন্য শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার ট্রিগারে আঙুল রাখা আছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল যদি আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় কোনো ধরনের হামলা চালায় তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, আমাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালানো হবে।
'আঘাত করে পার পাওয়ার যুগ শেষ হয়ে গেছে' সর্বোচ্চ নেতার এই বক্তব্যকে তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাক তালাব বলেন, আমরা ইরানের প্রিয় ও সম্মানিত জনগণকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আইআরজিসিতে নিয়োজিত আপনাদের বিপ্লবী সন্তানেরা, আপনাদের সেনাবাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগ উন্নত প্যাসিভ ডিফেন্স পরিকল্পনা এবং অত্যাধুনিক সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরমাণু কেন্দ্রগুলো রক্ষায় তৎপর রয়েছে।
গেলো ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরাইল। এ হামলার পর ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর ঘোষণা দেয় এবং কনসুলেট ভবনে হামলার ১০ দিন পর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি।
শনিবার দিবাগত রাতে আইআরজিসি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এসময় ইসরাইলকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে জর্দান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। তবে এতো কিছুর পরও ইরানি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইসরাইলের।
সবশেষ সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা ও সংযমের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। এক্ষেত্রে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে হামলা চলাতে পারে ইসরাইল, এমনটাই ধারণা করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।