দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবী একটি দিন কাটিয়েছে কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় আছে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের বহু দেশ আবারও সংঘাতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেই থেকে এখনো পৃথিবীর বহু দেশেই চলছে দ্বন্দ্ব সংঘাত যুদ্ধ।
জেনেভা একাডেমির এক হিসাব বলছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের ১১৭টি দেশ বা অঞ্চলে সংঘাত চলছে। এর মধ্যে যেমন আছে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ, তেমনি আছে আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীণ সংঘাত ও যুদ্ধ। আর এক কারণে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ নিজেদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করছে, বাড়ছে সামরিক ব্যয়ও।
বিশ্বের সব দেশের সামরিক শক্তির হিসাবে রাখা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সবশেষ সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে সেরা সামরিক শক্তির দেশ আমেরিকা ও রাশিয়া। এরপরে আছে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন, জাপান, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং ইতালি।
এই দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাহিনীর আবার রয়েছে বিশেষ কমান্ড বাহিনী। এদের মধ্যে কোন বিশেষ বাহিনী সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং ভয়ংকর তার রেটিংও সামনে এনেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। বিভিন্ন দেশের বিশেষ বাহিনী বা কমান্ডো ফোর্সের সার্বিক দক্ষতা এবং সক্ষমতার বিচারে এই তালিকা তৈরি হয়েছে।
কমান্ড ফোর্সের নিরিখেও প্রথম দশে রয়েছে আমেরিকান সেনার একাধিক উইং। এর মধ্যে রয়েছে এস গ্রিন বেরেটস, ডেল্টা ফোর্স ও নেভি সিল। আলাদা আলাদ পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে মার্কিন সেনার এই তিনটি কমান্ডো বাহিনী। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত বিশেষ বাহিনীকে অভিযানে পাঠানো হয়।
মূলত গেরিলা যুদ্ধের জন্য গ্রিন বেরেটসকে তৈরি করেছে আমেরিকা। ১৯৭৭ সালে অক্টোবরে ডেল্টা ফোর্স প্রতিষ্ঠা করেন কর্নেল চার্লস বেকউইথ। লাতিনের বিভিন্ন জায়গায় এখনও মোতায়েন রয়েছে এই বাহিনী। অন্যদিকে আল কায়দার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মিশনে পাঠানো হয়েছিলো নেভি সিলকে।
সামরিক শক্তির বিচারে বর্তমানে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ব্রিটেন। তবে নৌযুদ্ধে ব্রিটেনের খ্যাতি অনেক দিনের। ব্রিটিশ বাহিনীতে রয়েছে একাধিক নৌ কমান্ডো ফোর্স। যাদের মধ্যে এস রেঞ্জার্স ও সাস গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭০ সালে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ রেঞ্জার্সরা এখনও পর্যন্ত বহু বিপজ্জনক অপারেশনে সাফল্য পেয়েছেন।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের বিবেচনায় প্রথম দশে জায়গা পায়নি ইসরাইল। তবে তাঁদের কমান্ডো ফোর্স খুবই শক্তিশালী। বিদেশের মাটিতে ঢুকে প্রতিপক্ষকে নিমূর্লের পাশাপাশি বিদেশ থেকে জিম্মি উদ্ধারের ক্ষেত্রে ইসরাইলের শায়েতেত বাহিনীর জুড়ি মেলা ভার। যদিও গাজা উপত্যকায় ব্যর্থ হয়েছে বাহিনীটি।
বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী ভারতের হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি কমান্ডো বাহিনী। মার্কোস, এনএসজি ও প্যারা এসএফ কমান্ডো ফোর্স তালিকায় উপরের দিকে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে নৌসেনার আওতায় আছে মার্কোস। বাকি দুটো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সবগুলো কমান্ডোর একাধিক মিশনে সফলতা রয়েছে।
তালিকায় জায়গা পেয়েছে পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ বা এসএসজি। এছাড়াও পোলান্ড, কানাডা ও রাশিয়ার কমান্ডো ফোর্সও এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম নেই কোনও চীনা কমান্ডো ফোর্সের।
পাশাপাশি জায়গা করতে পারেনি দুই কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি বা জাপানের কমান্ডো বাহিনীও। এর মধ্যে ফ্রান্স ও উত্তর কোরিয়া পরমাণু শক্তিধর দেশ। তবে, নিজেদের কমান্ডো ফোর্স নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে চীন ও উত্তর কোরিয়া। তাই, এই দু’দেশের বিশেষ বাহিনী নিয়ে তথ্য খুব কমই থাকে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ছাড়াও, বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তির খোঁজ-খবর রাখা বেশ কিছু পোর্টালের হিসাবে যেসব দুর্ধর্ষ বিশেষ বাহিনীর শীর্ষ দলে আছে, সেগুলো হলো-
আমেরিকার নেভি সিল, রাশিয়ার আলফা গ্রুপ, ইতালির জিআইএস, ইসরাইলের শায়ারেত ম্যাটকাল, চীনের স্নো লিওপার্ড কমান্ডো ইউনিট, পোল্যান্ডের পোলিশ গ্রোম, কানাডার জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-টু, অস্ট্রিয়ার ইকেও কোবরা এবং স্পেনের স্পেশাল নেভাল ওয়ারফেয়ার ফোর্স।