নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে (সিএএ) প্রথম দফায় তিন শতাধিক বিদেশিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। বিতর্কিত এই আইনের অধীনে প্রথমবারের মতো বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিলো দেশটি।
ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা বুধবার রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ১৪ জনের হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন। বাকিদের কাছে সেই সনদ ই–মেইল মারফত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে। খবর হিন্দুস্থান টাইমসের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় দ্বারা গঠিত কমিটি নাগরিকত্বের আবেদনগুলো খতিয়ে দেখছে। যাচাইকরণ এবং নাগরিকত্ব দেখার প্রক্রিয়াটি আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকবে।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু সীতাল দাস বর্তমানে বসবাস করছেন উত্তর দিল্লির মঞ্জুকা টিল্লাতে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী এ নারী একজন।
সীতাল বলেন, যদিও আমি এখানে (ভারতে) ২০১৩ সাল থেকে বসবাস করছিলাম, তবে আজ আমি মনে করি আমি এই দেশেরই। আমি এখন নির্দ্বিধায় ভারতকে আমার নিজের দেশ বলতে পারি এবং কোনো ভয় ছাড়াই যে কোনো জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারি।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) স্লোগান 'মোদি কি গ্যারান্টি'র কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ, যারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে কয়েক দশক ধরে ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল তাদের অপেক্ষা এখন শেষ হয়েছে।
শাহ এক্সে হিন্দিতে লেখেন, আমি মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই মানুষদের অধিকার দেয়ার জন্য যারা কয়েক দশক ধরে ভুগছেন। আমি আমার সমস্ত উদ্বাস্তু ভাই ও বোনদেরও আশ্বাস দিচ্ছি যে, মোদি সরকার তাদের সকলকে সিএএ-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেবে।
তিনি আরও বলেন, তিন দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে শুরু করেছে এবং মোদি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।
শুরু থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নানা সমালোচনা করে আসলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি বিরোধী শিবিরের নেতারা।
২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা (হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি) ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত।
ভারতের সংসদের দু’কক্ষে পাশ হওয়ার পরে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে।
এই আইনের আওতায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, তারাই এই আইনের অধীনে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন।
২০১৯-এ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাসের পর থেকেই ভারতজুড়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। এমনকি দাঙ্গাও বাঁধে দিল্লিতে।