গেলো মাসে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানে নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়েই নতুন প্রেসিডেন্ট খুঁজে নেবেন ইরানিরা।
ইরানভিত্তিক প্রেসটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। তবে ভোটারের উপস্থিতি বেশি হলে ভোটগ্রহণের সময় মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম প্রহরেই ভোট দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
ব্যালট বাক্সে নিজের ভোট দেয়ার পর সর্বোচ্চ এ নেতা উপস্থিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন একটি আনন্দের দিন। কারণ, এদিন জনগণ আগামী কয়েক বছরের জন্য তাদের সরকার প্রধানকে নির্বাচন করবেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শক্তিমত্তা ও সম্মান এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে।
এসময় তিনি সর্বস্তরের জনগণকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত হয়ে তাদের রায় প্রদানের আহবান জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি, ইরানি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন। ভোট প্রদান এমন একটি কাজ যার জন্য কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না, কিন্তু এর মাধ্যমে অনেক সুফল পাওয়া যায়। যে কাজে খরচ নেই কিন্তু অনেক সুফল তা থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
এদিকে ইরানের অভিভাবক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় জানান, কেবলমাত্র ইরান থেকেই নয় বরং বিশ্বের ৯৫টি দেশ থেকে এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ইরানিরা।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী ৮০ জনের রেকর্ড পর্যালোচনা করার পর দেশটির সংবিধানের ১১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ছয়জনকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে অভিভাবক পরিষদ। এরপর এই ছয় প্রার্থী ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা চালান ও টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেন। তবে শেষ সময়ে দুই প্রার্থী অন্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চার প্রার্থী হলেন- মাসুদ পেজেশকিয়ান, মোস্তফা পুরমোহাম্মাদি, সাইদ জলিলি এবং মোহাম্মদ বাকের কলিবফ।
ভোটগ্রহণ শেষে আগামী দুই দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কোনো প্রার্থীই যদি কমপক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, সেক্ষেত্রে ভোট পাওয়া শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে আবারও রান-অফ রাউন্ডের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গেলো মাসে আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে দুটি বাঁধ উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। এরপর হেলিকপ্টারে চড়ে ইরানের উত্তর-পশ্চিমের তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি ও তার সহযাত্রীরা। পথিমধ্যে পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি।
পরে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকায় ইরানি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধানী দল।
দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি, পূর্ব আজারবাইজানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম, প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান মেহেদি মুসাভি। প্রাণ হারিয়েছেন হেলিকপ্টারের পাইলট, কো-পাইলটও।