দখলদার ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এরমধ্যে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে আঘাত করলেও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শহর জেরুজালেম এবং হাইফার পাশাপাশি পুরো ইসরাইলজুড়ে আকাশে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরুর পরপরই ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে ইসরাইলিরা।
ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে রিপোর্টারদের মাটিতে শুয়ে পড়তে দেখা গেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ শোনা গেছে।
এদিকে তেল আবিবের একটি সূত্র বলছে, ইসরাইলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা বর্তমানে জেরুজালেমে একটি জরুরি বাঙ্কারে লুকিয়ে রয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, এদিন ইসরাইল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে কমপক্ষে ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করলেও, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দখলদার বাহিনী।
এক বার্তায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে আইডিএফ ইসরাইলের নাগরিকদের স্থানীয় সেনা কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে।
চলতি সপ্তাহে ইসরাইলি বিমান হামলায় লেবানন প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছেন। নাসরুল্লাহ হত্যার বদলা নেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলো তেহরান।
ইরান বলছে, হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ইসরাইলকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তেহরান। ইরানের আধাসরকারি তাসনিম বার্তা সংস্থা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বরাত দিয়ে একথা জানিয়েছে।
তবে ইসরাইল যদি ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে তারা আরও নিষ্ঠুর হামলার সম্মুখীন হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে আইআরজিসি।
এর আগে ইরান দখলদার ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে বলে মঙ্গলবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ ধরনের কোনো হামলা হলে তা তেহরানের জন্য ‘গুরুতর’ পরিণতি বয়ে আনবে বলে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন।
মধ্যপ্রাচ্যের কসাই খ্যাত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার ইরানের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ইসরাইল পৌঁছাতে পারবে না।
ইসরাইলে ইরান হামলা চালালে তা মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসব আশঙ্কার মধ্যেই এ হামলা চালালো তেহরান।
গেলো বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। এ আগ্রাসনে ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ।
চলমান এ গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ইরান, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো। এর জেরেই ইসরাইলের সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে দেশগুলো।