পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের ডাকা বাঁচা-মরার সমাবেশকে ঘিরে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লকডাউন জারি করে এই বিক্ষোভ নস্যাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির সরকার।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত ডাকে’ সাড়া দিয়ে রোববার দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দিতে গাড়িবহর নিয়ে ছুটে আসতে শুরু করে পিটিআই সমর্থকরা। তবে পুলিশি বাধায় ইসলামাবাদে ঢুকতে ব্যর্থ হয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকশ’ সমর্থকরা।
পিটিআইয়ের এই বিক্ষোভকে বেআইনি ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। এর আগে ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে রাজধানীর প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে ইসলামাবাদে আসার সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লাহোরেও পুলিশ পিটিআইয়ের প্রচুর কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে কোনো ধরনের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও ইমরানের ঘনিষ্ঠ নেতা আলি আমিন গান্দাপুর ভিডিও বার্তায় বলেছেন, মানুষ যেন শহরের ডি চকে জমায়েত হন। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি পূরণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওখানে অবস্থান করার জন্য ইমরান খান নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজধানীর প্রবেশমুখ ডি চক এলাকায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। এতে ১৪ কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পিটিআই কর্মীরা দাবি করেছেন, পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছুঁড়ছে এবং লাঠিচার্জ করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার সকালে ইসলামাবাদজুড়ে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডি চকে পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, ইমরান খান সমর্থকরা ইসলামাবাদের রেড জোনে পৌঁছালে কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেপ্তার করবে।
তিনি বলেন, কেউ সেখানে পৌঁছালে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টিকে জনগণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অসুবিধার জন্য দায়ী করে নকভি বলেন, বাসিন্দা ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্যদিকে পিটিআই নেতারা জানিয়েছে, সোমবার সকালে ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে পদযাত্রা শুরু করেছে।
শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মিছিলটি থামানোর চেষ্টায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ইমরান খান সমর্থকদের গ্যাস মাস্ক ও প্রতিরক্ষামূলক চশমা পরে থাকতে দেখা গেছে।
সোমবার বিক্ষোভকারীদের বহনকারী গাড়ির একটি বহর ইসলামাবাদে পৌঁছানোর কথা ছিলো। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ৯ থেকে ১১ হাজার বিক্ষোভকারীর প্রত্যাশা করছেন, অন্যদিকে পিটিআই বলছে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে যুক্ত হন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গিয়ে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল ইমরান খানকে। ২০২৩ থেকে থেকে তিনি জেলে বন্দি।
তার তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ইমরানের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫০টির মতো ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত ডিসেম্বরে ইমরানকে জামিন দেয়া হলেও আইনি জটিলতায় তিনি মুক্তি পাননি।