অবশেষে, নানা নাটকীয়তার পর দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় ভোরবেলা রাজধানী সিউলে ইউনের ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আকস্মিক সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার পর বিদ্রোহের অভিযোগে অভিশংসিত হন তিনি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সিউলের পাহাড়ি এলাকার ওই বাসভবনে বসবাস করছিলেন ইউন। বাড়িটির চারদিক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিলো এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে ছিলো সশস্ত্র বাহিনীর একটি ছোট দল।
মঙ্গলবার রাতে ৩০০ পুলিশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্তকারীদের একটি দল ইউনের বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেয়। তারপর ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করে মূল শহর অভিমুখে রওনা হয়। তবে গ্রেপ্তারের আগে প্রেসিডেন্ট গার্ড বাহিনীর সাময়িক প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলকে রাজধানী সিউলের দুর্নীতি তদন্ত অফিসে নেয়া হয়েছে। নিজের গ্রেপ্তার ও তদন্তকে অবৈধ দাবি করে ইওল বলেছেন, কোনো অস্বস্তিকর রক্তপাত রোধ করার জন্য তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে রাজি হয়েছেন।
তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ইউনের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই গ্রেপ্তার অবৈধ এবং ইউনকে জনসমক্ষে হেয় করার জন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে ইউন সুক ইয়োলই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি অভিশংসন ও গ্রেপ্তার পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।
ডিসেম্বরে অভিশংসিত হওয়ার পর থেকে ইউন তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছিলেন। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। কিন্তু তিনি পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছেন না। তাকে গ্রেপ্তারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে একবার ইউনকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে কয়েক ঘণ্টার অভিযান চালান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে, তার নিরাপত্তা বাহিনীর বাধায় সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। এবারও ইওলকে গ্রেপ্তারের বাধা দিয়েছিলো প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালতে অভিশংসনের অনুমোদন না আসা পর্যন্ত প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদেই থাকছিলেন তিনি। এরিমধ্যে, সরকারি কর্মকর্তাদের সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী ইউনের বেতন তিন শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
সবাইকে হতবাক করে দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন ইউন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। স্বল্পস্থায়ী এই সামরিক আইন জারির জেরে ১৪ ডিসেম্বর ইউনকে দেশটির পার্লামেন্টে অভিশংসন করা হয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শুরু হয় ফৌজদারি তদন্ত।