কলকাতার আলোচিত আরজি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হলো শনিবার। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের ১৬২ দিন পর বিচার পেলো তিলোত্তমা।
শনিবার ভারতীয় সময় বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করে দোষী সাব্যস্ত করা হয় একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। আগামী সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সাজা ঘোষণা করবে আদালত।
তবে এদিনও সঞ্জয় রায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তার বক্তব্য, এই কাজ একার পক্ষে করার সম্ভব নয়। কিন্তু বিচারক জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ।
পরদিন, অর্থাৎ ১০ আগস্ট ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া। তারপর কেটে গেছে পাঁচ মাস ৯ দিন।
গত ১২ আগস্ট নির্যাতিতার বাড়িতে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এরপর গত ১৩ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান সংস্থাকে (সিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করলো আদালত।
তদন্তভার গ্রহণের পর সিবিআই প্রথম থেকেই অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের ফাঁসির আবেদন করেছিলো। চার্জশিটেও তাকে একা দোষী হিসেবে দাবি করা হয়। সেই প্রেক্ষিতেই এদিন শিয়ালদহ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় রায়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিভিক ভলেন্টিয়ারের ১০ বছর বা ২৫ বছরের জেল, আমৃত্যু কারাবাস, এমনকি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ২০ জানুয়ারি সাজা ঘোষণা করবে শিয়ালদহ আদালত।
এদিন সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আদালত কক্ষে চিৎকার করে ওঠেন সঞ্জয়।
তিনি বলেন, আমি কিছু করিনি, আমি নির্দোষ। যারা করেছে তাদের কেন ছাড়া হলো? আমার কোনো দোষ নেই। সবাই মিলে করেছে। আমি পাপ করিনি। দোষ করলে গলার রুদ্রাক্ষ খুলে পড়ে যেত।
বিচারক জানিয়ে দেন, সোমবার এ মামলার সাজা ঘোষণা। সেদিন সঞ্জয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
এদিকে নির্যাতিতার বাবা-মা সিবিআই তদন্তে খুশি নন সে কথা বারবার জানিয়েছেন। মামলার রায় বেরোনোর আগেই তারা বলেছিলেন, মেয়েকে হারানোর পর তাদের সব হারিয়ে গেছে। তাই বিচারকের রায়ে তাদের আর কিছুই যায় আসে না। তবে সত্যিই যদি অভিযুক্তরা ধরা পড়তো এবং তাদের শাস্তি হত, তবে তাদের মেয়ের আত্মার শান্তি হত। তারা মনে করছেন, বড় দোষীরাই এখনও অধরা রয়ে গেছেন।
তারা বলছেন, এই ঘটনা সঞ্জয় রায়ের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। সিবিআই মূল দোষীদের আড়াল করছে বলেও সন্দেহ তাদের। এছাড়া প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একাংশও মনে করে, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত।