দুই মাস ধরে গাজায় যে নাজুক যুদ্ধবিরতি চলছিলো, তা ১৮ মার্চ ভোরে ইসরাইলের টানা বোমাবর্ষণের মাধ্যমে সেটি হঠাৎ ভেঙে পড়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন- হামাসের সামরিক কমান্ডার ও সংগঠনের রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
তবে হামলার সময় এবং পদ্ধতি ইঙ্গিত দেয়, এতে আবাসিক এলাকায় থাকা হামাস নেতাদের পরিবার ও সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরমধ্য দিয়ে নতুন অভিযানের সূচনা হয়েছে। ইসরাইল বলছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে হামাস টালবাহানা করায় হামলা শুরু করেছে তারা।
ইসরাইলের নতুন হামলায় গাজায় আবারও প্রতিদিন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার অস্বীকৃতি এবং যুদ্ধবিরতির মেয়াদ না বাড়ানোর কারণেই নতুন করে সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে তার এই দাবি পুরোপুরি সত্য নয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩০ জন জীবিত জিম্মির মুক্তি ও আটজনের মরদেহ ফেরত দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইল প্রায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া ইসরাইলি বাহিনী গাজার বেশিরভাগ এলাকা থেকে পিছু হটেছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এবং সব জীবিত জিম্মিকে মুক্তির কথা রয়েছে। তবে, ইসরাইলি প্রতিনিধি দল চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে নির্ধারিত বৈঠকে অংশ নেয়নি।
দীর্ঘমেয়াদি অভিযান পরিকল্পনা?
ইসরাইলের সামরিক নেতৃত্বের অনেকে, বিশেষ করে নতুন আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির গাজায় দীর্ঘমেয়াদি স্থল অভিযান চালানোর পক্ষে। এই পরিকল্পনায় ট্যাংকসহ পুরো সাঁজোয়া বাহিনী গাজায় প্রবেশ করবে এবং হামাসের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে গাজার সাধারণ জনগণ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
কারণ তারা ফের ঘরবাড়ি ছেড়ে উপকূলবর্তী অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিতে বাধ্য হবে। এতে গাজার অবশিষ্ট অবকাঠামোও ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে, ইসরাইলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সামরিক অভিযানের ফলে গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়বে।
নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ
এদিকে, নেতানিয়াহুও এই মুহূর্তে চরম রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। চলতি মাসের মধ্যে বাজেট পাস করতে না পারলে দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই সরকার টিকিয়ে রাখতে ডানপন্থি জোটের দাবির মুখে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চূড়ান্তভাবে, বৃহৎ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি নিতে হবে। ঠিক এখন যেমন ট্রাম্পের হুশিয়ারির পর অভিযান চলাচ্ছে ইসরাইল।