কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর নজিরবিহীন হামলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতজুড়ে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা আর স্তম্ভিত পর্যটনপ্রেমীরা। আতঙ্ক কাটেনি প্রত্যক্ষদর্শীদের। নিরাপত্তাহীন বোধ করায় ভয়ে দ্রুত কাশ্মীর ছাড়ছেন সেখানে থাকা অন্য পর্যটকরাও। আবার যাদের পরিকল্পনা ছিলো সেখানে যাবার, তারারও সফর বাতিল করেছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। হামলায় এ পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। হামলার পর সৌদি আরবে সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এই শোক প্রকাশ করার মতো কোনও শব্দ নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং পেরুতে ১১ দিনের সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
স্বর্গরাজ্য কাশ্মীর ভ্রমণে নিয়ে নারকীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন পর্যটকরা। ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বদলে যায় মুহূর্তেই বদলে যায় পুরো দৃশ্য। সে স্মৃতি মনে করে আতঙ্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পর্যটক বলেন, আমি দুইজনের ওপর গুলি চালাতে দেখেছি। সাথে সাথে মানুষজন ছোটাছুটি শুরু করে। সেখান থেকে আমি তিনজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে পেরেছি।
ভারতের নাগপুরের গোপাল রুপচান্দ পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। জানান নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, আমরা তেমন কিছু দেখতে পারিনি। গুলির শব্দ শুনতে পেয়েই প্রাণপণ পালানো শুরু করি আমরা। হামলার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন কাশ্মীরের অন্য পর্যটকরাও।
অনেকেই দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছেন সেখান থেকে। হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে মঙ্গলবার মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন, জম্মু কাশ্মীরের বারামুল্লাহ এলাকার মানুষজন। তারা বলেন, এই হামলা অত্যন্ত কাপুরুষোচিত এবং বর্বর। তারা আমাদের অতিথি, এই হামলার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, যত মানুষ নিহত হয়েছেন তারা সবাই নিরপরাধ, পর্যটক। নিহতদের মধ্যে নববিবাহিত দম্পতি ছিলো। তারা সবাই শুধু ঘুরতেই এসেছিলো। এ হামলার মানে কী!
এদিকে, কাশ্মীরে হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন স্থানীয়রা। তারা শ্লোগানে শ্লোগানে এ হামলার নিন্দা জানান। অনেককেই বিক্ষোভে পাকিস্তান বিরোধী শ্লোগান দিতে শোনা যায়। এসময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে কাশ্মীর জুড়ে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ওই অঞ্চলের গণপরিবহন ব্যবস্থায়ও।
এদিকে, ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। জানা গেছে, দেশটির ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) একটি দল ইতোমধ্যেই শ্রীনগরে পৌঁছেছে এবং আরও কয়েকটি টিমের সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি, দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও পহেলগাম পরিদর্শনে যাবেন।