কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এরিমধ্যে কোন রকম পূর্ব সংকেত ছাড়াই ভারত সিন্ধু নদের উপনদী ঝিলমের পানি ছেড়ে দেওয়ায় কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
ঝিলমের পানি বাড়তে থাকায় পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে এখন বন্যা পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই ভেসে গেছে সেখানের মুজাফফারবাদ। চাকৌটির বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ভাসছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান প্রশাসনের তরফ থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খালি করে দেওয়া হয়েছে বিতস্তা তীরবর্তী এলাকা।
বরফের পাহাড়ের ওপর থেকে পানি নেমে এসে ঝিলম নদী ভেসে গেছে। আজাদ কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঝিলম নদী থেকে ভারত সরকার না জানিয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছে। সে কারণেই এই বন্যা পরিস্থিতি। সে এলাকার মানুষের জমি-জায়গা, চাষের জমি, সবই ভেসে গিয়েছে।
যদিও ভারত সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত স্বীকার করা হয়নি, পাকিস্তানকে না জানিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী কোনও পানি ছাড়া হয়েছে কিনা।
সিন্ধু নদ থেকে সামান্য দূরের একটি সবজিখেতের কৃষক হোমলা ঠাকুর জানান, তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। একদিকে সূর্যের প্রখর তাপ, আরেক দিকে নদীর পানি কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার পর ভারত উজানে সিন্ধুর পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
ঠাকুর বলেন, যদি তারা পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এই পুরো এলাকা, পুরো দেশ থর মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমরা না খেয়ে মরব। তিব্বত থেকে উৎপত্তি হওয়া সিন্ধু নদ ভারত-পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে।
সিন্ধু পানিচুক্তি অনুযায়ী, যদি সত্যি ভারত পাকিস্তানকে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেয়, যদি সিন্ধু নদীর পর ভারত বাঁধ তৈরি করে, তাহলে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে যাবে। বিশেষত আজাদ কাশ্মীর থেকে শুরু করে করাচি পর্যন্ত এই নদী বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে গিয়েছে। যদি নদীর ওপর বাঁধ তৈরি করে দিয়ে, ভারত ইচ্ছামতো পানি ছাড়তে থাকে, তাহলে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ চোখের নিমেশে ভেসে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও মিসাইল, বোমার প্রয়োজন পড়বে না, পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে কেবল পানিই যথেষ্ট। পানি মাধ্যমে ‘যুদ্ধ’ করে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশ বিধ্বস্ত করে দেওয়া সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি গত বুধবার একতরফা স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এ চুক্তির কারণে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি খামারের জন্য পানি পাওয়ার পথ নিশ্চিত হয়েছিল। চুক্তি স্থগিত করে ভারত বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তান নির্ভারযোগ্যভাবে আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের দাবি, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা চালানো তিনজনের দুজন পাকিস্তানের নাগরিক। তবে ইসলামাবাদ এ ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন সিন্ধু নদ এবং এর শাখা নদীগুলোর পানিবণ্টন হয়ে আসছে। দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী, অভিন্ন তিনটি নদীতে ভারত শুধু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে পারে, বড় কোনো জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না। তবে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।