পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। সংঘাতের এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। খাদ্য, প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত ও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছেন দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ। দীর্ঘ সারি দেখা গেছে জ্বালানি পাম্পের স্টেশনগুলোতেও।
চিরবৈরী দুই প্রতিবেশির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা জোরদার হওয়ায় দেশ দুটির সীমান্ত–সংলগ্ন এলাকাগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয় লোকজন। এরই মধ্যে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কায় অনেকেই খাবার ও নিত্যপণ্য বেশি কিনে বাড়িতে মজুত করছেন।
ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সীমান্ত এলাাকাগুলোতে। একের পর এক মহড়া, ড্রোন আর মিসাইল হামলায় রীতিমতো কয়েকদিন ধরেই আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সংঘাতের রেশ পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায়।
জ্বালানি পাম্পগুলিতে যানবাহনের দীর্ঘ সারির পাশাপাশি মুদি দোকানগুলোতে দেখা যায় স্থানীয়দের ভিড়। মাংস, ময়দা, ডাল, তেল, চা এবং রান্নার গ্যাসসহ এক মাসের বাজার করে রাখছেন শহরের বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্কতা জারি করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা অমনপ্রীত ধীল্লন। বয়স ২৬ বছর। অমনপ্রীত জানান, সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে তাঁদের গ্রাম। সেখানকার অনেকেই নারী ও শিশুদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও এটা ভাবছি...আমাদের গ্রামেও হামলা হতে পারে।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি জেলার কয়েকজন বলেন, সেখানকার কয়েকটি বাড়িতে গোলা পড়েছে। তাই ভয়ে অনেক পারিবার রাতের বেলা বড় পাথরের আড়ালে কিংবা বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছেন। জীবনে কখনো এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখিনি। গত রাতে গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষ শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো ছেড়ে চলে গেছেন। কিছু মানুষ বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন।
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনা বলে মনে করছেন অনেকে। উরির বারামুল্লা শহরের বাসিন্দা বশির আহমদ বলেন, এত তীব্র গোলাবর্ষণ। শব্দ, সাইরেন আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না। বাড়িঘর ফেলে পাথরের আড়ালে বা বাংকারে আশ্রয় নিতে হচ্ছে আমাদের।
লাহোরের ৩৪ বছর বয়সী বাসিন্দা আরুশা রামিজ বলেন, আমাদের গ্রামসীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে নারীদের ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমিও ভাবছি, কারণ আমাদের গ্রাম পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে।
শুক্রবার লাহোরে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষ খাবার, রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আর ওষুধ সংগ্রহ করছেন। এ পরিস্থিতিতে কৃত্রিমভাবে দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মানবেতর অবস্থায় দিন যাচ্ছে আশ্রয় শিবিরে থাকা স্থানীয়দের। সেখানেও খাবারের জন্য দেখা যায় দীর্ঘ সারি। মজুত করা এই খাদ্য কতদিন সরবারহ করা যাবে সেই আতঙ্ক এখন সবার চোখেমুখে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশ ভারত পাকিস্তানের। নতুন করে শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্ব গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে জনমনে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দু’দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না এলে তা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা পুরো বিশ্বের।