মধ্যপ্রাচ্য ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে ইসরাইল। অন্যদিকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং মুসলিমদের জন্য ইসরাইলকে সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে ইরান। গাজা সঙ্কট নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এই বৈরিতা নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রথমবারের মতো একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও ইসরাইল। এরই ধারাবাহিকতায় ইরানের বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল।
বৃহস্পতিবার, ইসরাইলের আভ্যন্তরীণ দুই সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস এমন খবর দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এক্সিওস দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে এক সপ্তাহব্যাপী হামলা চালাতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। এজন্য যাবতীয় রসদ ও পরিকল্পনা গুছিয়ে ফেলেছে দেশটি।
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে আলোচনা ভেস্তে গেলে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে দ্রুত হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই পরিকল্পনার সাথে পরিচিত দুই ইসরাইলি সূত্র অ্যাক্সিওসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিরাপত্তার কারণে সূত্রগুলো নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
সূত্রগুলো বলছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত কয়েকদিন ধরেই এই বিশ্বাস থেকে সরে এসেছে যে, পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা শিগগিরই ভেঙে যেতে পারে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মনে করে সফল হামলা চালানোর জন্য তাদের উপযুক্ত সময় দ্রুত বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাই আলোচনা ব্যর্থ হলে ইসরাইলকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সূত্রটি সেনাবাহিনী কেন বিশ্বাস করে, পরে হামলা হলে কার্যকারিতা হারাবে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
উভয় সূত্রই মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে নিশ্চিত করেছে যে, ইরানে সম্ভাব্য হামলার জন্য ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাপক মহড়া ও অন্যান্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রচুর প্রশিক্ষণ চলছে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী সব কিছু দেখভাল করছে। একটি সূত্র বলেছে, ইসরাইলের প্রস্তুতির বিষয়টি তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন।
ইসরাইলের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পারমাণবিক আলোচনা ভেঙে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন এবং ট্রাম্প আলোচনা নিয়ে হতাশ হবেন এবং তাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে প্রস্তুত থাকবেন। তবে এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবুজ সংকেত ছাড়াই নেতানিয়াহু তার পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং এই বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু এই সপ্তাহের শুরুতে পারমাণবিক আলোচনার অবস্থা নিয়ে শীর্ষ মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি দলের সাথে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এক বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার পঞ্চম দফা শুক্রবার রোমে হবার কথা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ দশ দিন আগে তার ইরানি প্রতিপক্ষকে চুক্তির জন্য একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব বলে আস্থা ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হবে কিনা এই প্রশ্নে আলোচনায় বাধার সৃষ্টি হয়।
গত রোববার মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজের এক অনুষ্ঠানে উইটকফ বলেন, আমাদের একটি খুব স্পষ্ট লাল রেখা রয়েছে, এবং তা হল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। আমরা সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতার এক শতাংশ বাড়ানোর পক্ষে না। আর ইরানের নেতারা বারবার বলেছেন, তারা এমন কোনও চুক্তি সই করবেন না যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেয় না। উল্লেখ্য, পরমাণু শক্তি তৈরিতে ইউরেনিয়াম হলো মূল পদার্থ।
দুটি ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের উপর যে কোনো ইসরাইলি হামলা এককালীন নয়, বরং কমপক্ষে এক সপ্তাহ স্থায়ী সামরিক অভিযান হবে। এই ধরনের অভিযান ইসরাইল এবং এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত জটিল এবং বিপজ্জনক হবে। এই অঞ্চলের দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইসরাইলি হামলা ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তার কারণ হতে পারে, যুদ্ধের কথা তো দূরের কথা।
সোমবার ছয় মাসের মধ্যে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের বিষয়ে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ একমত। তিনি বলেন, আমরা তাদের স্বার্থকে সম্মান করি এবং তারা আমাদের স্বার্থকে সম্মান করে এবং তারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে একত্রে কাজ করে।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, তিনি ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে বাধা দেবেন এবং পারমাণবিক অস্ত্র পেতে বাধা দেয় এমন যে কোনো চুক্তিকে সম্মান করবেন। কিন্তু যাই হোক না কেন, ইসরাইল এমন একটি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার বজায় রাখে, যা আমাদেরকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে।