ভোটের মাঠে প্রভাব তৈরি করবে না, নির্বাচনের সময় সেই ধরনের সরকারের পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে।
ইসির ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে ইভিএম ব্যবহার না করারও পরামর্শ দেন তারা। এদিকে সিইসি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য।
নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপে বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপে ৩৭ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেন ১৭ জন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বেলা ১১টা ৯ মিনিটে ১৭ জনকে নিয়েই সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছে সহযোগিতা চান তিনি।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটা সকলের অংশগ্রহণে হলে সেটা সফলতা হতে পারে। শতভাগ সফলতা হয়ত হবে না; কেউ কেউ বলেছেন ৫০-৬০ শতাংশও যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটাও বড় সফলতা।
তিনি বলেন, কমিশনকে সাহসী হতে হবে। সাহসের সঙ্গে সততাও থাকতে হবে। জীবনের শেষ প্রান্তে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিশিষ্টজনদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে এগোতে চাই।
সংলাপে অংশ নেয়া বিশিষ্টজনরা নির্বাচনে সবার ঐক্যমত ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, ভোটারদের বাধাহীনভাবে ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করা, ভোটের আগে-পরে ভোটারদের বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে নিঃস্পৃহ থাকবে। সে নির্বাচনের ফলাফলকে নিজের পক্ষে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না অথবা কোন ধরনের উৎসাহও যোগাবে না।
তিনি আরো বলেন, এমন সরকার যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের সংবিধান এবং আইনে প্রদত্ত অধিকার কার্যকর করার কোন সুযোগ নাই। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরাই যেন নির্বাচনে মনোনীত হন, তার জন্য যে আইন আছে তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবেন আপনারা। প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।
তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরণ, কেমন নির্বাচন হবে- এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্যে আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কিনা তা চিহ্নিত করুন আপনারা।
আর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নির্বাচন কমিশনকে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সত্য বলতে হবে।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সঙ্কটে পড়েছে। সবার নাম প্রকাশ করেনি কমিটি। এছাড়া নূরুল হুদা কমিশনের সাবেক সচিব এবং আরেক সাবেক সচিবের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় নতুন ইসির দুই সদস্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপির সংলাপ বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি কঠিন সমস্যা, দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বয়কট করে বেড়াচ্ছে। এটা সমস্যা। এর সমাধান করতে হবে।
টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এই সংলাপ শেষে সিইসি বলেন, ৬০ শতাংশ ভোট পরলেই নির্বাচন সফল বলে ধরে নিতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমাদের পাওয়ার কিছু নেই। এখান থেকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমরা যদি ইতিবাচক কিছু করতে পারি, আপনারা যে সাজেশনগুলো দিয়েছেন, ওগুলো বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনকে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, তাহলে সেটা আমাদের সবার অংশগ্রহণে একটা সফলতা হতে পারে।
আরও পড়ুন: গুদামে টিসিবির বিপুল পরিমাণ পণ্য, আটক ডিলারসহ তিন
তিনি আরো বলেন, বিগত নির্বাচনে বেশ কিছু কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কেউ বলছে ভোট দিচ্ছে না। তবে নারায়ণগঞ্জের ইলেকশন খুব সুন্দর হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমের এটা একটা বড়দিক।
তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে অনেকেই অভ্যস্ত নয়। মেশিনের মাধ্যমে কোন ডিজিটাল কারচুপি হয় কি না, পৃথিবীর অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করে দিয়েছে, কেন করলো সেটা গবেষণা করা উচিত বলেও অনেকে মতামত দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওইদিনও আমন্ত্রিতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই সাড়া দেননি।
বর্তমান কমিশন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়ার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা দায়িত্ব বুঝে নিয়েই সংলাপের উদ্যোগ নেয়।
একাত্তর/আরএ