ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে এতোদিন বাংলাদেশের পরিচিতি থাকলেও, বাস্তবে তা আর পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে এখন চার ঋতুর চক্র চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়া ও পরিবেশবিদরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রভাব পড়েছে দেশের ঋতু বৈচিত্র্যে। কাগজে কলমে ছয় ঋতুর দেশ হলেও প্রকৃতপক্ষে এখন চার ঋতুর প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে বাংলাদেশে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে।
আর কৃষকরা বলছেন, অসময়ে বৃষ্টি অতিরিক্ত রোদ হওয়া, আর মাটির গুণ কমে যাওয়ার প্রভাব সরাসরি পড়ছে ফসলের উৎপাদনে।
বাংলার বহু পরিচিত খনার বচন হলো- ‘যদি হয় চৈতে বৃষ্টি, তবে হবে ধানের সৃষ্টি’। এই হিসাবে, এবার দেশে ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ার কথা।
কিন্তু কৃষকরা বলছেন, বিষয়টা মোটেও তেমন না। আবহাওয়া এখন বৈরী। অসময়ে যেমন বৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি প্রয়োজনের সময় মিলছে না পানি।
রোদের তাপও অস্বাভাবিক। আর এতে কমছে মাটি ও পানির গুণাগুণ। তাই ফসল উৎপাদন হয়ে পড়েছে কৃত্রিম সার আর ওষুধ নির্ভর।
কিছুদিন আগে হঠাৎ বৃষ্টির কথা উল্লেখ করে কেরানীগঞ্জের এক কৃষাণি একাত্তরকে বলেন, এই দিনে মানুষ বৃষ্টির জন্য কাঁদছে। কিন্তু এখন বৃষ্টি হচ্ছে।
আরেক কৃষক হঠাৎ বৃষ্টি আর তীব্র তাপপ্রবাহের কথা উল্লেখ করে বলেন, কৃষিকাজ করি অনেকদিন। কিন্তু এই রকম অবস্থা দেখি নাই।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই যখন অবস্থা, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে দেশে এখন কয়টি ঋতু চক্র চলছে?
প্রান্তিক এক কৃষক, যিনি বারোমাসই ফসল উৎপাদনে জড়িত, তিনি বলছেন, দেশে এখন মূলত তিনটি ঋতু, চারটাও ঋতুও নেই। সব পাল্টে গেছে।
আর আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন স্পষ্টতই চার ঋতুর প্রভাব চলছে। এগুলো হলো- গরম বা গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া, বৃষ্টি বা বর্ষাকালীন মৌসুম, বর্ষা পরবর্তী মৌসুম ও শীতকাল।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান, আবহাওয়ার চরিত্র অনুযায়ী আমরা বিশ্লেষণ করে বলে থাকি দেশে এখন চার ঋতু।
ঋতু পরিবর্তনের এই দায় প্রধানত দূষণের। পরিবেশের উপর মানবসৃষ্ট দূষণের সেই দায় কড়ায় গণ্ডায় ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি।
বাতাসে বাড়ছে কার্বনের উপস্থিতি। পলিথিনের মতো ক্ষতিকর আবর্জনা দীর্ঘ মেয়াদি দূষণ ঘটাচ্ছে মাটি ও পানির। বিশ্বজুড়েই চলছে একই অবস্থা। সেই প্রভাবও পড়ছে দেশের জল হাওয়ায়।
তাই বৈশ্বিক দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায়ও শীর্ষ সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান।
তাই কৃষির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিজ্ঞানীরাও অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক রেজাউল করিম সিদ্দিক।
বলেন, কৃষি বাঁচাতে ঋতু পরিবর্তন ও আচরণের সাথে সাথে বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা করছেন, কীভাবে এখানে নতুন নতুন জাত ও ধরণ দেওয়া যায়।
তবে বড় বড় শহরে পাঁচ তারকা হোটেলের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে আলাপই হোক না কেনো, পরিবর্তনের অভিঘাতের সরাসরি শিকার সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক।