‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ স্লোগানে ১৪৩২ বাংলা বছর বরণ করে নিতে প্রস্তুতি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। চারুকলা অনুষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, চব্বিশের চেতনা ধারণ করেই এবারের আয়োজন হচ্ছে। মাছ, বাঘ ও শান্তির পায়রা থাকবে শোভাযাত্রার অনুষঙ্গ। থাকবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিকৃতি। তবে শোভাযাত্রার কী নাম হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ঈদের ছুটির আমেজ কাটতে না কাটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় একটু একটু করে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক বাদেই বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। তবে এক ভিন্ন বাস্তবতায় নেয়া হচ্ছে এবারের আয়োজন। সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, আয়োজনের সাথে দুই দশকের বেশি সময় যুক্ত এক শিক্ষার্থী।
চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ কাগজ কেটেছেটে তৈরি করছেন বাংলার বাঘ। কেউবা শোলা দিয়ে বানাচ্ছেন সমৃদ্ধির প্রতীক লক্ষ্মীপ্যাঁচা। কেউ ব্যস্ত রঙতুলি দিয়ে মাটির সরায় নকশা অঙ্কনে। তাদের ব্যস্ততাই বলে দিচ্ছে, ঈদের আমেজের মধ্যেই শুরু হয়েছে বৈশাখ বরণের প্রস্তুতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড. আজহারুল ইসলাম শেখ চঞ্চল জানান, এবারের আয়োজনে যুক্ত হচ্ছে ২৪ এর চেতনা। ফ্যাসিবাদবিরোধী মোটিফে তাই থাকছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি। থাকবে মুগ্ধর পানির বোতলের পাশাপাশি চিরচেনা বাঘ, মাছ, পালকি আর শান্তির পায়রা।
এখন পর্যন্ত শোভাযাত্রার কমপক্ষে পাঁচটি প্রতিকৃতি চূড়ান্ত। পেঁচা, পাখিসহ সাত থেকে আট প্রকারের কয়েকশ’ মুখোশ রাখা হচ্ছে। তবে শোভাযাত্রা নামের সঙ্গে মঙ্গল থাকবে কিনা, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নিশ্চিত হয়নি শোভাযাত্রার গতিপথ। তবে, গরমের কথা মাখায় রেখে খুব বড় পথ ভ্রমণ করবে না শোভাযাত্রাটি।
আজহারুল ইসলাম বলেন, চারুকলা অনুষদ বরাবরের মতোই শোভাযাত্রার মূল আয়োজন করবে। তবে এবার এ শোভাযাত্রা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। এতে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলো নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। শোভাযাত্রার কোন পথে যাবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’, এই প্রতিপাদ্যে এবার পালন হবে নববর্ষ উদযাপনের শোভাযাত্রা। সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে, চারুকলার শিক্ষার্থীরা রঙতুলিতে তৈরি করছেন বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মুখোশ। তাদের আঁকায় উঠে আসছে বাংলার রূপ-ঐতিহ্য।
চারুকলার মাঠে দেখা গেলো প্রকৌশলীদের ব্যস্ততা। সাথে আছেন চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও মোটিভ শিল্পীরা। তাঁদের নির্দেশনায় কাজ করছেন কারিগররা। তৈরি হচ্ছে বিশাল প্রতীকী ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যে থাকবে বিশাল আকারের স্বৈরাচারের প্রতীকী। এছাড়াও থাকবে একটি বাঘের ভাস্কর্য। থাকবে পাখির একটি প্রতীকী ভাস্কর্য।
শুধু, শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নয় গোটা চারুকলার দেয়ালও সাজবে লোকজ আলপনায়। নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকবে কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, এ বছর প্রথমবার জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি সার্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।