রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আর ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হচ্ছে কোরবানির ঈদ। মুসল্লিদের মাঝে এই ঈদের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। সাম্য, মানবতা ও ত্যাগের তাগিদ নিয়ে আসে এই ঈদে। তাই ঘরে ঘরে আঁচ লেগেছে সেই উৎসবের, পশু কোরবানির মাধ্যমে সব পশুত্বকে আরও একবার বিসর্জনের উপলক্ষ্য এসেছে দেশে।
শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদ, ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রধান জামাত। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির প্রস্তুতি নেন।
নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় শুরু হয় পছন্দের পশু কোরবানি। বাংলাদেশে সাধারণত গরু বা ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। এ অঞ্চলে শতবছর বা তারও আগে সাধারণত বকরি বা ছাগল কোরবানি দেয়া হতো। এ জন্য এই ঈদের পরিচিতি ছিল ‘বকরি ঈদ’ বা ‘বকরিদ’। দেশভাগের পর গরু কোরবানি দেয়া বাড়তে থাকে।
ঈদের সকালে রাজধানীতে বৃষ্টি বাধা হয়নি, নামাজ শেষে গরু-ছাগল জবাই, আর রান্না-খাওয়ায় উৎসবের আমেজে ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন মুসলমানরা। আবহাওয়া অফিস বলেছিল, এবার ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির আভাস কিছুটা বেশি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের নামাজ শেষ করেই পশু জবাই দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরবাসী। মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেন এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা পশু জবাইয়ে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবেশীরা একে অপরের গরু জবাই দিতে সহযোগিতা করছেন।
বাড়ির সামনের রাস্তায়, গাড়ির গ্যারেজ এবং কেউ কেউ খোলা মাঠে পশু কোরবানি দিচ্ছেন। কোরবানির পশুর মাংস আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সামাজিক সংগঠন দরিদ্র মানুষের ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। সংহতি, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার চিত্রও ফুটে উঠেছে।
ঈদের পরের দু’দিনও পশু কোরবানি করার সুযোগ আছে। আগামী সোমবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ বিলিয়ে দিতে হয় গরিব-মিসকিনকে। আত্মীয়দের দিতে হবে এক ভাগ।
এবার ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পশু জবাই করার জন্য আলাদা স্থান বেঁধে দেওয়া হয়নি। বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। সকালে বৃষ্টি না থাকায় পশু জবাই ও মাংস ব্যবস্থাপনার কাজ নির্বিঘ্নে সারা গেলেও বিকালের ভাগে বৃষ্টি হলে বর্জ্য অপসারণ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ঢাকায় এ বছর প্রায় সাত লাখ পশু কোরবানি হতে পারে, তাতে ৫০ হাজার টনের মত বর্জ্য তৈরি হবে। সেভাবেই দ্রুততম সময়ে অপসারণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ইতোমধ্যে তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার প্লাস্টিক, পলিব্যাগ ও বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হটলাইন চালু রাখা হবে যাতে নাগরিকরা বর্জ্য সংক্রান্ত তথ্য দিতে পারেন। ১২ ঘণ্টার ভেতরে কোরবানির ময়লা পরিষ্কার করবে দুই সিটির কর্তৃপক্ষ।
এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে বরে ধারণা করছে ডিএনসিসি। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পেলোডার নিয়োজিত থাকবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাড়ে ১২ লাখ পলিব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং ও চার হাজার ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।
ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে টিভি ও রেডিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্র আয়োজন করেছে বিশেষ সংখ্যার। ঈদের ছুটিতে পাঠক যেন তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত না হন, এ জন্য ছাপা সংবাদপত্র বন্ধ থাকলেও চালু থাকছে অনলাইনগুলো। এই ঈদে ছুটির পাঁচ দিন প্রথম আলো প্রকাশিত হচ্ছে ই-পেপারে।
ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়েছে গত ৫ জুন। সরকারি চাকরিজীবীরা আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি উপভোগ করবেন।