সেকশন

রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১
 

বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী প্রচারের নেপথ্যে কী?

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১২ পিএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারত বিরোধী এক ধরনের প্রচারণা চলছে। সেখানে ভারতীয় পণ্যসহ দেশটিকে 'বয়কট' নিয়ে করা বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে কয়েকটি ছোটখাটো রাজনৈতিক দলও যুক্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশিরভাগ পোস্টদাতা বলছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারত অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এই কারণে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন।’

এখন প্রশ্ন হলো- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন দেশ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের অবস্থান কেমন ছিল? আর কেনই বা শুধু ভারত-বিরোধী প্রচারণা চলছে? চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল। এই দুই দেশের ব্যাপারে নীরবতা কেন?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশি তৎপর ছিল আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপির পক্ষে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছিলেন পিটার হাস। সরকারকে চাপে রাখতে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা না, তার মিত্রদেরকেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রকম তৎপরতায় শামিল করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হলেও আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।’ বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীনও। 

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, ‘সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন চায় চীন। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই নির্বাচন নিয়ে বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।’ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি দেশটির জনগণই ঠিক করবে। 

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক দিকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীন, রাশিয়া এবং ভারত। অথচ গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারকে সমর্থন করার দায়ে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চলছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শুধু ভারত বিরোধী কেন? ‘চীন আউট’ এবং রাশিয়া আউট’ চলছে না কেন? তারাও তো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল।

বাংলাদেশে ভারত বিরোধী এই অবস্থান নতুন নয়। মূলত ধর্মীয় কারণে ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তান প্রেমী মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার কারণেও তারা ভারতকে পছন্দ করে না। আবার চীন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও এ বিষয়ে তাদের কোনও ক্ষোভ দেখা যায় না। ভারত বিরোধিতা বাংলাদেশে ট্রাম কার্ড হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত পদ্ধতি।

ভারত বিরোধী এই রাজনীতি তীব্র হয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এরশাদ বা তার পরবর্তী সময়েও ভারত বিরোধিতা চলে এসেছে। নব্বই দশকে রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা কার্ডটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সময় ভোট আসলেই প্রচার চালানো হতো- ‘ভারতের বিভিন্ন স্থানে নৌকা টাঙানো রয়েছে’, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে ঢাকা হবে দিল্লি’ কিংবা ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে’। 

এ ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধিতা এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী বীজবপনের চেষ্টা করা হয়। ২০১৮ সালে ভোটের পর বিএনপি ভারত ইস্যুতে সরব হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের চুক্তি সম্পাদনের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল বিএনপি।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে টানা ১৫ বছর আন্দোলন করে জনসমর্থন না পেয়ে ‘ভারত বিরোধী’সেই পুরানো কার্ড ব্যবহার করছে বিএনপি। দলটির নেতাদের কথাতেও তাই ফুটে উঠেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। 

ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে। সরকারও এ সুযোগে দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছে।’ আর বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্ত করছে ভারত সরকার। তারা তাদের পছন্দের বাইরে যেতে পারছে না।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধানকে সমর্থন করায় ভারতের ওপর এতো রাগ বিএনপির। কিন্তু একই কারণে চীন বা রাশিয়ার বিষয়ে কিছু বলছে না তারা। চীন বা রাশিয়ার পণ্য বয়কট নিয়ে মুখে রা নেই বিএনপি নেতাদের। তারা জানেন বিরোধীতার ক্ষেত্রে ধর্ম একটা বড় হাতিয়ার। পাকিস্তানকে এখনও বাংলাদেশের যত মানুষ বন্ধু ভাবে, তার মূল কারণ ধর্ম। একাত্তরে পাকিস্তানিদের গণহত্যা তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনীতির মাঠে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে বারবার বেছে নিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে আবারও ভারত বিরোধী মনোভাব কাজে লাগাতে চাইছে দলটি। যাকে ‘প্রেসার ডিপ্লোমেসি’ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন,  প্রকাশ্যে ভারতের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি একটি বার্তা দিতে চাইছে যে, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশে শেষ কথা নয়। যার ফলে ভারত তার নিজের স্বার্থের জন্যই যেন বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে- এটাই তাদের কৌশল।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী। 

আরবিএস
গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন যে কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান হাতিয়ার। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তারা জনগণের একেবারে কাছাকাছি যায়, নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে এবং নেতৃত্ব বিচার করে। শুধু যেসব রাজনৈতিক দল...
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, আল-জাজিরাসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়...
ক’দিন ধরেই চারদিকে ফিসফাস… নির্বাচন হচ্ছে তো? চারদিকে ধুন্ধুমার প্রচার। নির্বাচনী সরকার এবং দলীয় নানা প্রস্তুতি। গণমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগ খবর নির্বাচন কেন্দ্রিক। বিদেশি গণমাধ্যমেও ছেয়ে গেছে দেশ। তবু...
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ৭ জানুয়ারি ২০২৪। এরইমধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে প্রার্থীরা প্রচার শেষ করেছেন। এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। একথা ঠিক, বিএনপির মতো...
ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের আশায় একদল সাংবাদিক স্বৈরাচারের দালালি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে বর্তমানে যে আইন আছে তা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা নির্ধারণ আইন মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী...
যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ফিরে তীব্র খাদ্যের সংকটের মুখে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। এক টুকরো রুটির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। উত্তরাঞ্চলে পর্যাপ্ত আবাসন, পরিষ্কার পানি, খাদ্যের...
টাঙ্গাইল-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ (৫৪) তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশ।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত