বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, আল-জাজিরাসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন।
বাংলাদেশের আগের কোনো নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে এতটা আলোচনা সমালোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। পাঁচ বছর আগে হওয়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দেশের সকল প্রধান রাজনৈতিক দল। কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়েও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কৌতূহল ছিল এবারের থেকে তুলনামূলকভাবে কম।
বিভিন্ন দেশের নামকরা সংবাদপত্র বা সাময়িকীগুলোতেও এবারের এই নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন বেরিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্যান্য প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোও বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অতীতে যে কোনো সময়ের থেকে বেশি তৎপরতা দেখিয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার একক দাবিদার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হারে বেড়েছে; ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সত্ত্বেও দেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা লাভ করেছে ; বাংলাদেশের রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে হয়েছে ।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, দেশ আজ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে। অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রের বাধা সত্ত্বেও, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্যে যে নির্বাচন আয়োজন প্রয়োজন ছিল শেখ হাসিনা তা করে দেখিছেন। নির্বাচনে ৪১ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে যা অনেক পুরোনো গণতান্ত্রিক দেশেও এই আধুনিক সময়ে বিরল। মানুষ আগুন সন্ত্রাসের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বহুবার দেশেকে অনেক গভীর সংকট থেকে তুলে এনেছেন। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতির এক সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন, যা কিনা ১৯৩০-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চেয়ে গভীরতর ছিল, তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ উৎরে গেছে সেই সংকট।
২০১৫ সালের তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্জন করেছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা; ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড অতিমারির সময় তিনি পুরো পৃথিবীকে দেখিছেন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও শুধু জনগণের প্রতি ভালোবাসার জন্যে কি করা যায়, তিনি টিকা উৎপাদনের আগেই উৎপাদনকারী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ডোনেশন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে নিশ্চিত করেছিল টিকা প্রাপ্তি।
বিশ্ব উন্নয়নের এসব সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব তাঁকে শুধু একটি দুর্লভ মাত্রিকতাই দান করেনি, বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ঋদ্ধ করেছে।
তাই পৃথিবীব্যাপী আজ বাংলাদেশকে বন্দনা, বাংলাদেশের নির্বাচন তাই আজকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আলোচনার বিষয়বস্তু। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ নির্বাচিত নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত , চীন, মার্কিন মিত্র জাপান ,রাশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যের প্রায় সকল দেশ, আমেরিকা নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ও নতুন সরকারের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রী সভায়ও স্বভাব সুলভ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। মন্ত্রী সভার ৩৭ জন সদস্যের মধ্যে যেমন অভিজ্ঞ ও সফল পুরোনো মন্ত্রীরা রয়েছেন তেমনি তরুণ ও নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ দিয়েছেন স্বপ্নে সঠিক লক্ষ্যে ছুটিয়ে নেয়ার। মন্ত্রী সভায় যেমন আছেন অনেকবার নির্বাচিত সংসদরা তেমনি আছেন একবারে প্রথমবার নির্বাচিত তরুণরাও।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে আগামীর যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শেখ হাসিনা করেছেন তার জন্যে যথার্থ মন্ত্রিসভায় তিনি তৈরি করেছেন। একই সাথে তিনি জানেন বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিদের আগ্রহের কারণও এই তরুণ কর্মক্ষম জনশক্তি। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগের উপর কর্মক্ষম, শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে তা এক ওপার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তি, যা বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, বসেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর আসনে, কিন্তু ২ বছরের মাথায়ই তিনি জনস্বার্থে পদত্যাগ করে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে শুরু করেছিলেন যুগপৎ আন্দোলন । তার কাছে জগণের ভোটের ও ভাতের অধিকারী ছিল সব সময় মুখ্য, তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি, আগুন সন্ত্রাসীদের ভয়ে পশ্চিমা রুটিন মানেননি।
জনগণের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর অন্যায়ের সাথে আপোষহীন দৃঢ়চেতা মনোভাবই ২০২৪ সালে তাকে ৫ম বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করেছে , আর বাংলাদেশকে করেছে বিশ্ব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়