দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ৭ জানুয়ারি ২০২৪। এরইমধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে প্রার্থীরা প্রচার শেষ করেছেন। এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। একথা ঠিক, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল অংশ নিলে নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো, যদিও এরইমধ্যে বহু আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। বিএনপির কিছু নেতা যেমন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের হয়ে অংশ নিচ্ছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জোরেশোরে প্রচার চালিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
বিএনপি দল হিসেবে নির্বাচনে আসছে না এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা বাঁধা সৃষ্টি করছে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে ৬ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ৮ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত (৪৮ ঘণ্টা) দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে এক জরুরি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি ২০১৪ সালের মত এবারও একই ভুল করলো। সরকার পতনের এক দফা দাবি তুলে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতার প্রেক্ষাপট তৈরি করার পরবর্তীতে বিএনপি আর মাঠে থাকতে পারেনি। মাঠের আন্দোলনে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপি পুরোনো পথেই হাঁটলো।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকার যে সুযোগ ছিল, বিএনপি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে চাইলো না। ২০১৩-১৪ সাল থেকে দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়েছে, বিএনপির নেতৃত্ব সেই বাস্তবতাকে ধারণ করতে পারেনি। পুরোনো পথে যে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়, বিএনপির নেতৃত্ব সে বিষয়টি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ২০২৩-২৪ সালে এসে ২০১৩-১৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা সফল না হওয়াই স্বাভাবিক।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন হলেও জাতীয় আন্তর্জাতিক নানা সংকটের ফলাফলে দেশে মূল্যস্ফীতিসহ বেশ কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে শক্তিশালী বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতো। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করে বা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা দুঃখজনক। বিদেশি শক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা হয়ত বিএনপিকে এই পথে পরিচালিত করছে।
আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হলে শুধু দেশের মধ্যে একটি শ্রেণি উপকৃত হয় এমন নয়। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া বিভিন্ন পরাশক্তি। বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা না থাকলে তারা নানাভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশের আত্মমর্যাদা রক্ষায়, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি, জরুরি ঠিক সময়ে নির্বাচন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করার দায়িত্ব শুধু ক্ষমতাসীন দলের নয়। এদেশের জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার।
অনেক লড়াই সংগ্রাম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একে চোখের মণির মত রক্ষা করতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মানুষ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি জোরালো সমর্থন জানাবে এমনটাই প্রত্যাশিত৷ নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে যোগ্যতম প্রার্থীকে নির্বাচিত করা, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারকে প্রয়োগ করেই একমাত্র তারা তাদের জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশের জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পছন্দ করে। ৫ বছর পর পর এই উৎসবে অংশ নিতে জনগণ মুখিয়ে থাকে। নির্বাচনের সেই উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিতের দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সকলেই যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সে ব্যবস্থা করতে হবে, ভোট চুরি রোধ করতে হবে। নাশকতা, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি জানিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ গণতন্ত্রকে বিজয়ী করবে, করতেই হবে।
লেখক: অধ্যাপক, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।