ক’দিন ধরেই চারদিকে ফিসফাস… নির্বাচন হচ্ছে তো? চারদিকে ধুন্ধুমার প্রচার। নির্বাচনী সরকার এবং দলীয় নানা প্রস্তুতি। গণমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগ খবর নির্বাচন কেন্দ্রিক। বিদেশি গণমাধ্যমেও ছেয়ে গেছে দেশ। তবু কেন এই প্রশ্ন? ভেবে পাচ্ছিলাম না। নির্বাচন নিয়ে যেসব আমজনতা প্রশ্ন করছিলেন এই দোষ তাদের নয়। তারা আসলে গুজবে আক্রান্ত। যে কোনো নির্বাচনের আগে যা হয় আর কী। গুজবের ডালপালা তো নানা ভাবে ছড়ায়। কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করা নিয়ে কেন? নির্বাচনের ঠিক আগের দিন গোপীবাগে ট্রেনে আগুন এবং দোষীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁসের পর খানিকটা বোঝা গেলো এই গুজবটাও ছিল নির্বাচন বিরোধী পরিকল্পনার অংশ।
অন্য যে কোন ঘটনার মত নির্বাচন বিরোধীদের অনেকেই হয়তো মুখটিপে হেসে বলবেন, ‘কে করছে সবাই জানে’। যারা কোন যুক্তি শোনেন না, সেসব অন্ধদের জন্যে আমি অবশ্য লিখি না। যারা যুক্তি দিয়ে তর্ক করেন, যাদের চিন্তার সত্য যুক্তিতে বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, আমার লেখা তাদের জন্যে। গোপীবাগের আগুন নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের দেয়া তথ্য নিয়ে যারা সন্দেহ করতে চান তাদের জন্যেই এই লেখা।
ডিবির ব্রিফিংয়ে এসেছে, একটি ভিডিও কনফারেন্সে আগুনের ষড়যন্ত্র হয়। এই কনফারেন্সের ভার্চুয়াল রেফারেন্সও দেয়া হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, ভার্চুয়াল রেফারেন্স দিয়ে মিথ্যা বলা যায় না। কারণ কেউ চ্যালেঞ্জ করলে এর প্রমাণ হাতের কাছেই থাকার কথা। সেটা না দিতে পারলে সেই রেফারেন্স মিথ্যা হয়ে যায়।
এখানে ওই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যোগ দেয়া একজনকে তার মোবাইল ফোনটিসহ গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে। গ্রেপ্তার সেই যুবদল নেতা এরই মধ্যে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। প্রচলিত ধারা অনুযায়ী যদি বলাও হয় যে গোয়েন্দারা চাপ দিয়ে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে, সেই যুক্তিও টিকবে না। কারণ উদ্ধার হওয়া তার ফোনটিও এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সের অকাট্য প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। চাপ দিয়ে মানুষকে মিথ্যা বলানো গেলেও যন্ত্রকে কী বলানো যাবে?
ওই ব্রিফিংয়ে কিছু চিহ্নিত বোমাবাজের কথা বলা হয়েছে। যাদের একসঙ্গে জেল খাটার কথা বলা হয়েছে। যে জেল খাটুক তার নামধামসহ বিস্তারিত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে থাকার কথা। সুতরাং সেখানেও সত্য লুকাতে না পারার আরেকটি নিশ্চিত সম্ভাবনা তৈরি হয়ে আছে।
চারদিকে গিজগিজ করছে বিদেশি সাংবাদিক। যে কেউ যখন তখন ওই ষড়যন্ত্রের ভিডিও রেফারেন্স চাইতে পারে। তাদের কাছে ফেক ভিডিও ধরার নানা টুলস থাকার কথা। সুতরাং এই ঝুঁকি গোয়েন্দা সংস্থার মত কোন প্রতিষ্ঠান নেবে কী? ব্রিফিংয়ে কিছু লোকের কথা বলা হয়েছে কিন্তু নাম প্রকাশ হয়নি। সেই নামগুলো প্রকাশ হলে নিশ্চয়ই আরও যুক্তি পাওয়া যাবে।
যদিও গোয়েন্দা পুলিশের এই ব্রিফিংয়ের আগেই, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী দেশের মতো নির্বাচন আয়োজন করতে সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে, আর দায় চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বিরোধী দলকে নিধন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা। এই ট্রেনে আগুন দেয়া সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। পুরোটাই মুখস্থ বুলি। যাই ঘটুক তিনি এ কথাই বলতেন। আমি জানি তার মত আরও অনেকেই একই রকম ভাবছেন, ভেবেছেন এবং আগামীতেও ভাববেন।
গোপীবাগের এই আগুনের পর আমার মনে হয় নির্বাচনে বাধা দেয়ার জন্যে নাশকতা করছে নির্বাচন বিরোধীরা। নিশ্চিত করে এমন আপ্তবাক্য বলার বিকল্প নেই। যারা ট্রেনে আগুন দিল, ২৮ অক্টোবর থেকে মোট ৩২১টি অগ্নিসংযোগের দায় তাদের। দেশের মানুষ দেখেছে কীভাবে একজন পুলিশ প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন বিরোধী যে কোন সহিংসতার দায় বারবার প্রমাণিত। দুই ট্রেনে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যাসহ এবারের ১১টি হত্যার দায়ও তাদের ওপরই বর্তাচ্ছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী